সরেজমিনে মহাখালীতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে ও মোহাম্মদপুরে গ্রীন হেরাল্ড স্কুলের সামনে স্থাপিত সিগন্যাল দু’টিতে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে সিগন্যাল বাতিটি পরীক্ষামূলকভাবে একবার চালুর পর থেকেই বন্ধ পড়ে রয়েছে।
সেখানকার এক নিরাপত্তাকর্মী নামপ্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, সিগন্যাল বাতি প্রথমদিন দুই ঘণ্টা চালু করতে দেখেছিলাম, এরপর থেকে আর চালু হয় না। মাঝে মধ্যে কিছু লোক আসে। তাদের কাছে শুনি, আজ চালু হবে, কাল চালু হবে। কিন্তু, এখনো হয়নি। শিক্ষার্থীদের সড়ক পারাপারে আমরাই কাজ করে যাচ্ছি।
অন্যদিকে, মোহাম্মদপুরে গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে বসানো সিগন্যালটি কাজ করলেও তা খুব একটা মানতে দেখা যায় না পথচারী বা যানবাহন চালকদের। নিয়ম অনুযায়ী, পারাপারের আগে পুশ বাটন চাপ দিয়ে সবুজবাতি জ্বলা সাপেক্ষে সড়ক পারাপারের কথা থাকলেও পথচারীরা চিরাচরিত হাত জাগিয়েই নেমে যাচ্ছেন সড়কে। পথচারীদের জন্য সবুজবাতি জ্বললে যানবাহনগুলোর জন্য জ্বলে ওঠে লালবাতি। কিন্তু, সেই লালবাতি দেখেও যানবাহন থামাতে দেখা যায় না পরিবহন চালকদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরস্পরকে দোষারোপ করেন চালক ও পথচারীরা। জাহাঙ্গীর আলম নামে এক পথচারী বাংলানিউজকে বলেন, সিগন্যাল দিলে গাড়িগুলো থামে না। তাই, এভাবেই চলে আসি। আর এখানে গাড়ি ধীরে চলে। তাই সিগন্যাল বাতি ছাড়া এভাবে আসলেও সমস্যা হয় না। এখানে যদি বাধ্যতামূলকভাবে গাড়ি থামার ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে গাড়িও থামতো আর আমরাও সিগন্যাল মেনে রাস্তা পার হতাম।
একই সড়ক দিয়ে চলাচলরত প্রজাপতি পরিবহনের এক চালক বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ যে যেভাবে পারে রাস্তা পার হয়। একসঙ্গে সিগন্যাল মেনে পার হলে তো আমরাও থামি। দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ শুধু চালকের! কিন্তু, মানুষ হুটহাট সামনে চলে আসলে আমরা কী করবো?
এদিকে, পুশ বাটনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান পরিবহন ও নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা। এর আগেও রাজধানীতে পুশ বাটন বসানো হয়েছিল, যা পরে অকার্যকর হয়ে পড়ে উল্লেখ করে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৮ সালে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের (ডিইউটিপি) আওতায় কারওয়ান বাজারে প্রথম পুশ বাটন বসানো হয়েছিল। তবে, জনগণের মধ্যে সেটির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেভাবে প্রচারণা চালানো হয়নি। আবার, ডিভাইসটিতে বিভিন্ন ত্রুটি হলে সেটি আর মেরামত করা হয়নি। ফলে, স্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে যায় সেই পুশ বাটন।
শামসুল হক আরও বলেন, সাধারণত এ ধরনের সিগন্যাল দ্রুতগতির সড়কে এমন জায়গায় বসানো হয়, যেখানে গাড়ি থামে না। সেখানে পথচারীদের পারাপারে গাড়ি থামাতে এমন ডিভাইসের বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু, যেখানে ধীরগতির গাড়ি চলে, সেখানে এমন ডিভাইসের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমাদের শহরে যানজটের কারণে যানবাহন এত ধীরে চলে যে, মানুষজন হাতের ইশারা দিয়েই রাস্তা পার হয়ে যায়। কেউ আর সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করে না। এর জন্য সবার আগে সাধারণ মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। কর্তৃপক্ষের উচিত এসব পদক্ষেপে বিনিয়োগ করার আগে এ থেকে কী ফেরত আসবে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা। কারণ, জনগণের অর্থের এমন অপচয় মানা যায় না।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মহাখালীর সিগন্যাল বন্ধ থাকার কথা নয়। আমরা দেখছি বিষয়টি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
এসএইচএস/একে