ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিটি পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত করবো: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
প্রতিটি পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত করবো: প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং

ঢাকা: দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিবেদিত প্রাণ হয়ে দেশের জন্য কাজ করছি। ইনশাল্লাহ, প্রতিটি পরিবারকে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্ত করবো।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত উন্নয়ন মেলা ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আর কেউ কখনো পেছনে টানতে পারবে না।

আমরা ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে সক্ষম হয়েছি। এবার সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মূল শত্রু কে? আমি বলতাম, আমাদের মূল শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য। কাজেই দারিদ্রের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়তে হবে। দারিদ্রের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে।

‘দারিদ্র বিমোচন করা, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। সব সময় একটাই প্রচেষ্টা নিয়েছি যে, দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে কী কী করা যায়। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করি। তারই ধারাবাহিকতায় কাজ করছি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫-০৬ সালে দেশে দারিদ্যের হার ছিল ৪১ ভাগ। আজ তা ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এটাকে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ ভাগের মধ্যে আমরা নিয়ে আসতে চাই। বাংলাদেশ যেন আর দরিদ্র না থাকে, বাংলাদেশ যেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলতে পারে, সেভাবে আমরা একটা হিসাব করেছি। ইনশাল্লাহ, আমরা তা করতে পারবো।

সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে, সেই পরিকল্পনাও আমরা তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে, এটা ধরে রেখে আমরা এগিয়ে যাবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ২০৭১ সালে আমি যখন বেঁচে থাকবো না, যারা থাকবে তারা এমন একটা দেশ পাবে, ঠিকই সোনার বাংলার নাগরিক হবে। ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করেছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই যে, বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল এই দেশকে তিনি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়বেন। শুধু ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত করা নয়, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে।

‘আওয়ামী লীগ সব সময় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। কারণ, এ সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া। ’

বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ পৃথিবীর সব জায়গায় একটা কথাই বলে, বাংলাদেশ উন্নয়নের বিস্ময়। আমাকেও অনেকে জিজ্ঞেস করে, এই যে এত দ্রুত উন্নয়ন করলেন, ম্যাজিকটা কী? আমার এখানে উত্তর খুব পরিষ্কার, ম্যাজিক বলে কিছু নেই। দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসা আর নিজের দেশকে জানা, নিজেদের দেশের জন্য কাজ করা। আমরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে দেশের জন্য কাজ করছি।

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, নারীদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা, দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কৃষকদের সার ও কৃষি উপকরণগুলো সহজলভ্য করা, ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ, গৃহায়ণ তহবিল থেকে দরিদ্রদের সহায়তা, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করাসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রতিটি মানুষের আবাসন নিশ্চিতে সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকে আমরা থাকার জায়গা করে দেবো। আমাদের হিসাব রয়েছে, কোন এলাকায় কত মানুষ গৃহহারা। তাদের আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া।

বস্তিবাসীদের জন্য সরকারের ঘরে ফেরা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে যত বস্তি রয়েছে, এগুলো আমি সার্ভে করিয়েছিলাম। তারা যদি নিজের গ্রামে ফিরে যেতে চায়, আমরা ঘর তৈরি করে দেবো, ছয় মাস ভিজিএফের মাধ্যমে বিনা পয়সায় খাদ্য দেবো। তারা নিজের গ্রামে গিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে, বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না।

তিনি বলেন, আমি এই কর্মসূচির নাম দিয়েছি ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি। সেভাবে তাদের পুনর্বাসনের একটা উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম, দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে তুলে আনার সেই চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।

মতিয়া চৌধুরীর হাতে সম্মাননা তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।  ছবি: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং

পিকেএসএফ-এর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু, এক সময় ‘ক্ষুদ্রঋণ’ কার্যক্রমই ছিল এর প্রধান কাজ। আমরা একে ক্ষুদ্রঋণের গণ্ডি থেকে বের করে এনেছি। সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে পিকেএসএফ কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পিকেএসএফ বর্তমানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে দেশে-বিদেশে একটি শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেছে। এটি বহুমুখী কাজ করছে।

১ কোটি ৪০ লাখ দরিদ্র ও নিম্নআয়ের পরিবারকে পিকেএসএফ বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই ফাউন্ডেশন দেশের ২০২টি ইউনিয়নে ‘সমৃদ্ধি’ নামক কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষাসহ জীবন-জীবিকা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সমন্বিত করে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বয়স্ক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবায়ন করছে ‘প্রবীণ কর্মসূচি’।

‘তাছাড়া, দেশের কৃষি খাতে আর্থিক পরিষেবার পাশাপাশি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজার সংযোগসহ কৃষির বিভিন্ন উপখাতের ভ্যালু চেইন ও দক্ষ উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করার মাধ্যমে পিকেএসএফ দেশের অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এখন পুষ্টির দিকে নজর দিয়েছি। এক্ষেত্রে পিকেএসএফ বিরাট অবদান রাখছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।

শুরুতে পিকেএসএফ জাগরণের গান পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানে এ বছর পিকেএসএফ-এর আজীবন সম্মাননা পান সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
এমইউএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।