শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন কলেজে কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের শুভ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইমদাদুল হক মিলন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে আসেন, তখন ধানমন্ডিতে কবিকে একটি বাড়ি দেওয়া হয়।
কালের কণ্ঠ সম্পাদক বলেন, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ কবিতা লিখেই রবীন্দ্রনাথ কবি হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশ স্বাধীন করার, সফল হয়েছেন। স্বপ্ন দেখো, স্বপ্নকে সফল করো।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, লেখালেখি করতাম বলে অনেকেই মেয়ে বিয়ে দিতে চায়নি। বলতো, মেয়েকে খাওয়াবো কী করে। যাই হোক, একপর্যায়ে একটি মেয়ে রাজি হয় আমাকে বিয়ে করতে। বিয়ের পর কোনো আয় না থাকায় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন চিন্তায় পড়ি, বউকে নিয়ে কোথায় উঠবো। একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে অফার দেওয়া হলো, তাদের বাড়িতে থাকতে। কিন্তু, আত্মসম্মানবোধের কারণে সেখানে উঠিনি। পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ির পাশেই টিনশেডের একটি বাসা নেই। কিন্তু, বউ সেখানে ওঠে না। শ্বশুরবাড়ি থেকে টিফিন পাঠাতো, সেই খাবার খেতাম। তখন টুকটাক লেখালেখি আর সাংবাদিকতা করি।
তিনি বলেন, একদিন পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করায় চাকরিটা চলে গেলো। তেমন আয়ও নেই। জীবন কীভাবে চলবে, এ চিন্তা করি। একদিন প্রচণ্ড গরম, টিনশেডের ভাড়া বাসায় বসে আছি, ফ্যানও নেই। খুব কষ্ট হচ্ছিল। সেদিনই লক্ষ্য স্থির করলাম, আমি লেখকই হবো। এভাবেই লেখক হয়ে ওঠা। সেটা মনে কষ্টও লাগে, আবার আনন্দও লাগে। তবে, যখন বইমেলা কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকে বলেন, ‘স্যার, আমি ছোটবেলায় আপনার বই পড়েছি, এখন আমার মেয়েও আপনার বই পড়ে। ’ তখন নিজেকে স্বার্থক মনে হয়। দুই প্রজন্মের কাছে নিজেকে পৌঁছাতে পেরেছি। সুতরাং, লক্ষ্য অটুট থাকলে মানুষ সফল হবেই।
সফল মানুষের উদাহরণ টেনে এ কথাসাহিত্যিক বলেন, পুরান ঢাকার ছেলে। বাবা বড় আইনজীবী। তিনি ভালো কলেজে পড়েন। কিন্তু, তার মন পড়ে থাকে ব্যবসায়। একদিন ঢাকার একটি এলাকায় আসলেন। দেখলেন, শুধু পানি আর পানি। তিনি ঠিক করলেন, এই এলাকায় একটি আধুনিক নগর গড়ে তুলবেন। ধীরে ধীরে ওই পানির এলাকায় গড়ে তুললেন নগর, সেটি হলো বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। সেই স্বপ্নবাজ সফল মানুষটি হলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। পরবর্তীকালে তিনি স্বপ্ন দেখলেন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান করবেন। পর্যায়ক্রমে কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, নিউজ ২৪ ও রেডিও ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে আরেকটি টিভি সম্প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। আসলে স্বপ্ন দেখলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেগে থাকতে হয়। তাহলে সফলতা আসবেই।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসার শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে সে সফল হবেই। সেই ভালোবাসার শক্তি থেকেই শুভ সংঘের যাত্রা শুরু। প্রতিদিন প্রত্যেকে একটি ভালো কাজ করলে বাংলাদেশ বদলে যাবে। পরিবার থেকে সেটা শুরু করতে হবে। অশুভ কাজে বাধা দেবো, শুভ কাজে এক হবো, দেশটাকে বদলে দেবো, এটাই হোক আমাদের শপথ।
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে ইমদাদুল হক মিলন যে বক্তব্য রাখলেন, তা আমাদের জন্য অনুকরণীয়।
তিনি বলেন, মাইলস্টোন কলেজ সমাজে আলো ছড়াচ্ছে। ২০০৮ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড একে শ্রেষ্ঠ কলেজ ঘোষণা করে।
শুভ সংঘ কমিটির সবাই ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করবে বলে আশাপ্রকাশ করেন কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শুভ সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাদেকুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শুভ সংঘ পরিচালক জাকারিয়া জামান, দপ্তর সম্পাদক সোহেল রানা, প্রমুখ।
এদিন কালের কণ্ঠ শুভ সংঘ মাইলস্টোন কলেজ শাখার নতুন কমিটির পরিচিতি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সব শুভ কাজে পাশে থাকার অঙ্গীকার করে মাইলস্টোন কলেজের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে কলেজের শিক্ষকরাও অংশগ্রহণ করেন।
পরে, কলেজের পক্ষ থেকে ইমদাদুল হক মিলনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অধ্যক্ষ। সবশেষে কাঞ্চন জামানকে সভাপতি ও নুরুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক করে শুভ সংঘ মাইলস্টোন কলেজ শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
টিএম/একে