হাতিয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের সাড়ে সাত কিলোমিটারের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র গর্ভেবিলীন হয়েছে তিন কিলোমিটার। অবশিষ্ট সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়ে আছে অন্তত দেড় হাজার পরিবার।
আপাতত অন্যের জমিতে বা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিলেও ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙনের কবলে ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিবার-পরিজন নিয়ে হতাশ এসব পরিবারের কর্তা ব্যক্তিরা। ভাঙনকবলিত শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলোর দাবি, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের যেনো পরিবার পরিজনসহ মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবশিষ্ট বসতভিটাসহ আবাদি জমি রক্ষার জোর দাবি জানায় স্থানীয়রা।
সরেজমিনে জানা যায়, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে তীব্র ভাঙনে দু’শতাধিক বসতবাড়ি বিলিন হয়েছে। বারবার জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় অসহায় ভাঙনকবলিতদের দাবি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু তীর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প প্রস্তাবনা ফাইলবন্দি থাকায় ভাঙনকবলিতরা কোনো সুফল পাচ্ছে না।
হাতিয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে ভয়াবহ ভাঙন। গত দেড় মাসে দু’শতাধিক বসতবাড়ি, কয়েক’শ একর আবাদি জমি, গাছপালা ব্রহ্মপুত্র গর্ভেবিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষগুলো জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে ভাঙনরোধে প্রতিকার চাইলেও কোনো আশ্বাস মেলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকার আতিকুর রহমান, নবাব আলী, বাচ্চু মিয়াসহ আরও অনেকেই বাংলানিউজকে জানান, আপাতত কেউবা অন্যের জমিতে কেউবা বাঁধে আশ্রয় নিলেও ভবিষ্যতের কী হবে তা ভেবে হতাশ তারা। ব্রহ্মপুত্র নদ দফায় দফায় ভাঙতে ভাঙতে এখন তারা নিঃস্ব। আগে জমির মূল্য কম ছিল, তাই অসহায় পরিবারদের আশ্রয় দিতো প্রতিবেশীরা। এখন জমির মূল্য বেড়ে গেছে, তাই কেউ জমি দিতে চায় না। বাঁধে হাজার হাজার পরিবার গাদাগাদি বসবাস করলেও সেখানেও এখন ঠাঁই নেওয়ার কোনো স্থান নেই। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানিয়েছি। যেভাবে ভাঙন চলছে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেকোনো মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যাবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমরা তীর রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ মিটার জায়গায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি। এখানে নতুন করে তীররক্ষা বাঁধের জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাস হলে এবং বরাদ্দ পেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
এফইএস/এএটি