মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আঙ্কারায় বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন সভায় তিনি একথা বলেন। বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ ১৫টি লক্ষ্য সামনে রেখে মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে শুরু হওয়া যৌথ সভাটি তুরস্কের সঙ্গে পঞ্চম সভা।
সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক চার মিলিয়ন (৪০ লাখ) শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে, আর বাংলাদেশ এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম প্রধান জনবসতিপূর্ণ ছোট দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হচ্ছে একটি সামাজিক বন্ধন ও সম্প্রীতির দেশ ও এটি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি হাতিয়ারও। কিন্তু, রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে এটা অনেকটাই হুমকির মুখে। তাই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই। যেকোনো উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তুরস্ককে সহায়তা করার অনুরোধ জানান আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারসহ ওই এলাকার পুরো পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে আমাদের সামাজিক ও জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। আমাদের সামাজিক বন্ধনসহ যেসব ক্ষতি হচ্ছে তা ডলার বা টাকার অংকে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে হবে, এটাই আমাদের প্রধান চাওয়া।
মন্ত্রী বলেন, তুরস্ক একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। যে দু’টি কারণে তুরস্ক সারা বিশ্বে অত্যধিক সমাদৃত হয় তার একটা হলো অসাম্প্রদায়িকতা, দ্বিতীয়টি হলো জঙ্গিবাদের কারণে বিশ্বের কোথাও মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের এই নীতিতে অত্যন্ত সামঞ্জস্য রয়েছে। কেননা বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনে বিসর্জন এবং ত্যাগ স্বীকারসহ অনেক ক্ষেত্রে অসাধারণ সামঞ্জস্য রয়েছে।
বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ ও গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সাত শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং এ বছর ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিত প্রাণ জনশক্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় ও বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশসুবিধা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে।
ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, গ্যাসসহ বেশ কিছু খাতে তুরস্কের বিনিয়োগের ইতিবাচক সাড়াকে সাধুবাদ জানিয়ে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। মুস্তফা কামাল বলেন, তুরস্ক বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তাই, তুরস্ক যদি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য জায়গা চায়, তাহলে সরকার তাদের সর্বোতভাবে সহায়তা করবে।
সভায় তুরস্কের স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দূরত্ব অনেক হলেও দুই দেশের মধ্যে ধর্ম, সংস্কৃতিসহ রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য। আমি আপনার (অর্থমন্ত্রী) এই সফরে অত্যন্ত আনন্দিত ও আশা করছি এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উদারতার মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আরাকানের এই মুসলিমদের ওপর যে অবিচার করা হয়েছে, সেটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। তুরস্ক এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।
এসময় অর্থমন্ত্রী তুরস্কের স্পিকারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি স্পিকারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তুরস্কের স্পিকার এতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
সভায় ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
এমআইএস/একে