ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইলিশ ধরতে নির্ধারণ হচ্ছে ফাঁস জালের আকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
ইলিশ ধরতে নির্ধারণ হচ্ছে ফাঁস জালের আকার

ঢাকা: কঠোর নজরদারি আর আইন প্রয়োগের কারণে চলতি বছর পর্যাপ্ত বড় ইলিশ ধরা পড়েছে জালে। সফলতার ধারাবাহিকতা আর জাটকা (ছোট ইলিশ) ইলিশ রক্ষার্থে এবার তাই ফাঁস জালের আকার নির্ধারণ করে দেবে মন্ত্রণালয়। 

এ নিয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ‘ইলিশ আহরণের জন্য ফাঁস জালের অনুমোদনযোগ্য ফাঁসের আকার নির্ধারণ বিষয়ক পর্যালোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।  

ফাঁস জালের আকার নির্ধারণ নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খসরুর সামনে শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে মত।

সচিব, যুগ্ম-সচিব, মৎস্য অধিদপ্তরে কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, গবেষকরা পর্যালোচনা সভায় অংশ নেন।

এর আগে ইলিশ ধরার জন্য জেলেদের জালের নির্দিষ্ট সীমা ছিল সাড়ে ৪ সেন্টিমিটার। এবার তা বাড়িয়ে সাড়ে ৬ সেন্টিমিটার বা দুই দশমিক ৬ ইঞ্চি নির্ধারণের কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়। তবে এর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকায় নির্দিষ্ট সীমা পেতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।

ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষে ফাঁস জালের আকার ৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার পক্ষে মত দেন গবেষকরা। এর পক্ষে তারা বলেন, এবার আইনের প্রয়োগ হয়েছে তাই জাটকা ধরেননি জেলেরা, নির্দিষ্ট সময়ে তারা ট্রলারও নদীতে নিয়ে যাননি। সাড়ে ৬ সেন্টিমিটার নির্ধারণ করে দিলে আগামীতে আরও উপকৃত হবেন জেলারা। এর মাধ্যমে যদি ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ ধরা না হয় তাহলে সর্বোচ্চ টেকসই উৎপাদন ৬ লাখ ৯০ হাজার টন ইলিশ পাওয়া যাবে।

প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনেকেই এর বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, এবার জাটকা নিধনে কঠোর নজরদারি করার কারণে ইলিশের আকার বড় হয়েছে। এতে লাভবান হয়েছেন জেলেরা, সমৃদ্ধ হচ্ছে অর্থনীতি। আবার কবে বা কতো বছরে এ জালের আকার নির্ধারণ হবে তা অজানা। তবে সার্বিক বিবেচনা করে এর আকার ৭ সেন্টিমিটার করা হলে ভালো হবে। এর মাধ্যমে যদি ২৭ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ ধরা না হয় তাহলে সর্বোচ্চ টেকসই উৎপাদন ৭ লাখ ২১ হাজার টন হবে।

পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খসরু বলেন, এ নিয়ে আরও আলোচনার দরকার। আমরা নিজের জন্য কিছুই করছি না, দেশের জন্য, দেশের অর্থনীতির জন্য আমরা ফাঁস জালের আকার নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। তবে যেহেতু শেষ পর্যায়ে আছে আশা করি কম সময়েই এর আকার নির্ধারণ হবে। ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে এবারের সিজনে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে তা গত পাঁচ বছরেরও তা ধরা পড়েনি।

তিনি বলেন, আমাদের কারেন্ট জালের মতো মশারি জাল নিয়ে ভাবার সময় এসেছে, যদিও মশারি জাল নিয়ে আইন রয়েছে। আমার মনে হয়, মশারি জাল পুরো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে নদীতে মাছের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ইলিশের ডিম আমরা যদি ভালোভাবে ফোটানোর সুযোগ দিতে পারতাম তাহলে মাছের কারণে নদীতে মানুষ নামতে পারতো না। আগে দাড়পোনা (ছোট এক জাতীয় মাছ) মাছ, চাট পোনা (ছোট চান্দা) মাছ পাওয়া যেত, এখন আর দেখা যায় না। এর কারণ মশারি জাল নদীতে এমনভাবে আসে যার মাধ্যমে এসব মাছের পোনা, রেণু উঠে আসে। এভাবে আরও অনেক মাছ আমরা হারাতে বসেছি।

বিজ্ঞানী জলিলুর রহমান বলেন, আমি বিশ্বাস করি সর্বসাকুল্যে ফাঁস জালের আকার সাড়ে ৬ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। এতে জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে, আরও বড় আকারের ইলিশ আসবে জেলের জালে।

অন্যদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ (ব্লু-ইকোনমি) যুগ্ম-সচিব তৌফিকুল আরিফ বলেন, আমরা আবার কবে নাগাদ ফাঁস জালের আকার নির্ধারণ করবো জানি না। তবে সার্বিক বিবেচনা করে এর আকার ৭ করা হলে ভালো হবে। এর মাধ্যমে যদি ২৭ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ ধরা না হয় তাহলে সর্বোচ্চ টেকসই উৎপাদন ৭ লাখ টনের বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব রইছ-উল আলম মন্ডলের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান দিলদার আহমেদ, মৎস্য অধিদফতর বাংলাদেশের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯
ইএআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।