সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উখিয়ার বালুখালী, পালংখালী এলাকার ১১, ১২, ১৩ এবং ১৯ নম্বর ক্যাম্পে পাকা পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব পিলারে কাঁটাতার লাগানোর কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা।
তিনি জানান, আপাতত শুধুমাত্র উখিয়াতে পিলার স্থাপনের কাজ চালানো হচ্ছে। ১০ ফুট দূরত্বে এক একটি পিলার বসানো হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জনবল বাড়লে কাজ আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে। তখন পিলার স্থাপন ও কাঁটাতার লাগানোর কাজ একসঙ্গে চলবে।
এদিকে সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক দাবি করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অপরাধপ্রবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা দেওয়া হলে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকানো এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক হবে। এছাড়াও বাইরের কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীও ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারবে না।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাহাড়ি এলাকায় এবং এসব ক্যাম্প কাঁটাতারে ঘেরা না থাকায় অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ শেষ হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক হবে।
কাঁটাতারের বেড়ার বিষয়ে উখিয়ার বালুখালী ১২ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, আমি মনে করি কাঁটাতারের ছিকল দেওয়া হলে ক্যাম্পের নিরাপত্তা আরও বাড়বে। এটাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কাঁটাতারের বেড়া দিলে আমাদের জন্য আরো সুবিধা হবে।
একই ক্যাম্পের মো. ইদ্রিস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছি সরকার যেটা করবে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। সরকারের সুবিধার জন্য এটা দেওয়া হচ্ছে, এতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর সেক্রেটারি মো. ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, সরকারের সিদ্বান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কারণে রোহিঙ্গারা যেমন বাইরে যেতে পারবে না, তেমনি বাইরের কোনো খারাপ মানুষও ক্যাম্পে ঢুকতে পারবে না।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই অশিক্ষিত, তাই কাঁটাতারের বেড়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বোঝানো উচিত।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে যাদের বাড়িঘর ভেতরে পড়ে গেছে। তাদের দাবি ওই এলাকার কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে অন্যত্র সরিয়ে স্থানীয়দের বাড়িঘর বাইরে রেখে কাঁটাতারের ঘেরা দেওয়া হউক।
উখিয়ার থাইনখালী চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. তোফাইল বলেন, ক্যাম্পের আশপাশে যারা আছি, এমনিতেই রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। এ অবস্থায় কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে যদি আমাদের বাড়িঘর ঢুকে যায়, ভবিষ্যতে আমাদের নানামুখি সমস্যা পোহাতে হবে। এছাড়া আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে হুমকির মুখে পড়বো।
একই এলাকার মনজুরা বলেন, আগে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারতাম, এখন পারবো না। কাঁটাতারের ভেতরে বাড়িঘর ঢুকে গেলে আমাদেরকেও রোহিঙ্গাদের মতো চলাফেরা করতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া কীভাবে করবে।
তিনি বলেন, ক্যাম্প ১১-তে আমার বসবাস। আমি দশ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। ১১, ১২ ও ১৯ এ তিনটি ক্যাম্পে প্রায় এক হাজার স্থানীয় পরিবার আছে। যেগুলো কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে পড়ে যাচ্ছে। তাই আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের দাবি, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভেতরে যেসব রোহিঙ্গারা আছে তাদের সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হউক এবং স্থানীয়দের কাঁটাতারের বাইরে রেখে ঘেরা দেওয়া হউক।
নিজের পাকা বাড়ি দেখিয়ে দিয়ে আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া দিলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই ভালো, এটা আমরা চাই। কিন্তু আমার এই পাকা বাড়িটি ভেতরে পড়ে যাচ্ছে, শুধু আমারটা নয়, এরকম প্রায় ৭শ বাড়িঘরের লোকজন এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। কারণ রোহিঙ্গারা মানুষ ভালো নয়।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বেনারকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। যার মধ্যে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সব মিলিয়ে এসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী যাতে দেশের ভেতর ঢুকে কোনো ধরনের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য কাঁটাতারের বেড়া বড় ভূমিকা রাখবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, রোহিঙ্গারা ভুয়া পাসপোর্ট ও ভুয়া এনআইডি করার জন্য ক্যাম্প থেকে বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্ঠা করে। এখন তা রোধ করা যাবে। এমনকি কাঁটাতারের বেড়ার কারণে তাদের অপরাধ প্রবনতা অনেকাংশে কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
এসবি/জেডএস