জানা গেছে, হতদরিদ্র ও ভূমিহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণে প্রতি বাড়ির বিপরীতে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এই টাকায় দুই কক্ষবিশিষ্ট শোবার ঘর, একটি রান্নার ঘর ও কড়িডোরসহ বার্থরুম নির্মাণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন।
চলতি অর্থবছরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার জন্য ৩৩০টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণে বরাদ্দ দেয় সরকার। যার মধ্যে কোনো উপজেলায় কাজের অগ্রগতি শতকরা ৭০ ভাগ হলেও কোথাও সবেমাত্র শুরু করা হয়েছে বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরে সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের দছির উদ্দিনের ছেলে ভূমিহীন শামছুল হকের নামে একটি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয় সরকার। ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সালামকে কাগজেকলমে প্রকল্পটির চেয়ারম্যান দেখানো হলেও বাস্তবায়ন করছেন হারাটি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। সেই বাড়ি নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও সিমেন্ট ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কাজ করায় সুবিধাভোগী ও স্থানীয়রা সদর ইউএনওকে অভিযোগ করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে সম্প্রতি ওই বাড়ির নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গিয়ে সত্যতা পেয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন ইউএনও। সেই সঙ্গে পুরো বাড়ি ভেঙে পুনরায় নতুনভাবে নির্মাণের নির্দেশ দেন তিনি।
বাড়ির মালিক সুবিধাভোগী শামছুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নিচ থেকে নিল্টন পর্যন্ত ইটের কাজ শেষ করেছেন। কিন্তু নিম্নমানের ইট ও কম দামি সিমেন্ট দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করায় মাঝপথে পরিদর্শনে এসে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। তিনি নতুন করে বাড়ি নির্মাণের নির্দেশ দিলেও তা শুরু করেনি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক।
প্রকল্পটির চেয়ারম্যান ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে নামমাত্র প্রকল্প চেয়ারম্যান করে স্বাক্ষর নিয়ে বিল উত্তোলন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ইউএনও কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে শুনেছি।
হারাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের চেয়ারম্যান যেই হোক কাজ আমি করছি, এতে কোনো সমস্যা নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেই হলো। তবে কাজ বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউএনও পুনরায় এসে যতটুকু ভেঙে দিতে বলবেন ততটুকু ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বাংলানিউজকে জানান, এ প্রকল্পের কাজ ত্রাণ শাখা বাস্তবায়ন করলেও দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি তার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ওই প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেটুকু কাজ করা হয়েছে তা ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০
আরএ