ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিশ্ব বাঙালি পুরস্কার পেলেন ৫ গুণী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
বিশ্ব বাঙালি পুরস্কার পেলেন ৫ গুণী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে পাঁচ গুণীজনকে বিশ্ব বাঙালি পুরস্কার-২০১৯ দিয়েছে বিশ্ব বাঙালি সংঘ।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ভারতের অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য ও কবি পার্থ বসু।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে তাদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ব বাঙালি সংঘের সমন্বয়ক মজিব মহম্মদ। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিচিতি তুলে ধরেন সালমা বাণী।

দীর্ঘদিন নতুন প্রজন্মকে মুক্তচিন্তা এবং জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করে জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে এই পদকের জন্য মনোনীত করা হয়।

পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি বলেন, জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। প্রতিটি পুরস্কারই স্বতন্ত্র। প্রাপককে তা আনন্দিত করে। উৎসাহিত করে। আজকে বাঙালি কাকে বলে এবং বাঙালির কী অবস্থায় আছে এ দুটো বিষয় প্রাসঙ্গিক। যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে, তাকে বাঙালি বলব। কিন্তু অবাঙালিরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য অতিরিক্ত গুণটা দরকার, কেবল বাংলা ভাষার ব্যবহার না, বাংলা ভাষার উৎকর্ষের জন্য সচেষ্ট হওয়া এবং বাঙালি যেন উন্নত হতে পারে, এর জন্য কাজ করা। কেবল ভালোবাসাই নয়, যেন অগ্রগতি হয়, তার জন্য চেষ্টা করা।

তিনি বলেন, বিশ্বে ৩০ কোটি বাঙালি আছে। কিন্তু ভালো অবস্থানে নেই। আমরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। কিন্তু যেটা হওয়ার কথা ছিল, শিক্ষাব্যবস্থা অভিন্ন ধারায় মাতৃভাষার মাধ্যমে হবে, সেটা হয়নি। তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা হয়েছে। এটি শ্রেণি বিভাজনের ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটাই প্রমাণ করে বাংলা ভাষার চর্চা হওয়ার কথা, বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার কথা। সারা বিশ্বে বাঙালি যারা ছড়িয়ে আছেন, তাদের সাহায্য করা, তাদের গৌরবান্বিত করা, সেটি হচ্ছে না। ত্রিশ কোটি বাঙালি অসম্মানজনক অবস্থায় রয়েছে। এটার কারণ এই তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা। আরেকটা কারণ হলো আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে পারছি না। উচ্চ-আদালত এবং উচ্চশিক্ষায়ও ব্যবহার করতে পারছি না।

ভারতের বিহারের মানভূম ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি বলেন, আপনারা বাংলা ভাষার মালা পড়েছেন। আমরা আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু পুরোপুরি সফল হইনি। ব্রিটিশ পিরিয়ড়ে আমরা অনেক কবির কবিতা পড়েছি। যেমন বন্দে আলী মিয়া। কিন্তু বর্তমানে তারা হারিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সংস্কৃতির বিনিময় করতে হবে। না হয় বাংলা ভাষা অন্ধকারে থেকে যাবে।
শিশুর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করছেন গুণীজনরা, ছবি: শাকিল আহমেদবাংলাদেশের ৮০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল বই পড়া আন্দোলনে যুক্ত করে উন্নত জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় বিশেষ অবদান রাখায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি বলেন, দেশভাগের পর আমরা একটা জাতিকে পেলাম খুব নিঃস্ব অবস্থায়, দুঃখী হিসেবে। শিক্ষা, অর্থ, বিত্ত কিছু্ই ছিল না। তখন আমার কাছে প্রয়োজন মনে হলো জাতির চেতনাকে বড় করতে হবে। শিক্ষা, মনের বিকাশ, মূল্যবোধ বড় করে তোলা এবং মনের জানালাকে খুলে দেওয়া বড় মন নিয়ে একটা বড় জাতি গঠন করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের পণ্ডিত কমে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রযোজনীয় পদক্ষেপের কথাও বলেন তিনি।

বাংলা পক্ষের মাধ্যমে সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গে ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখায় পুরস্কার পান কবি পার্থ বসু। তিনি বলেন, আমাদের নাগরিক হিসেবে দুটো পরিচয় রয়েছে। কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে এক। এ মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কেন্দ্র ঢাকা। এটা বলতে আমার দ্বিধা নেই।

বিশ্ব বাঙালি সংঘের সংঘাচার্য রাজু আহমেদ মামুন বলেন, বর্তমান সভ্যতা এক ঘোর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের হাতে এসেছে আত্মা ধ্বংসের ভয়াবহ অস্ত্র। নতুন নতুন প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে মূল্যবোধহীন দিশেহারা প্রজন্ম। আছে ক্ষুধা-বৈষম্য-কুসংস্কার-অশিক্ষা আর জঙ্গিবাদ। আছে- মানুষ ক্রয় বিক্রয়ের নৈতিকতাহীন পুঁজিবাদী করপোরেট চালাকিও। বিপন্ন আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সেই উচ্চারণ- ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’।

তিনি বলেন, শুধু একা একা এই স্বপ্ন দেখলে তো হবে না। এ জন্য চাই সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা, চাই সংগঠন। আর সেই স্বপ্নের বোধিবৃক্ষটির নাম- বিশ্ব বাঙালি সংঘ। আমরা স্বপ্ন দেখলাম, সংগঠন হলো। এখন সে নরম পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু জাতীয় সংকট মোকাবিলা বা জাতি বিনির্মাণের কাজটা আমরা শুরু করছি কেবল তা তো নয়! অনেক শ্রদ্ধাপদ অগ্রজ নিরলসভাবে এই কাজ করে আসছেন অনেকদিন ধরে। কাজেই শুরুতে আমরা ভাবলাম- এই মহান অগ্রজদের চরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোটাও কর্তব্য। তাই এই ‘বিশ্ব বাঙালি পুরস্কার’।

পুরস্কার দেওয়ার পর ‘বর্তমান বিশ্বের বাঙালি: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন কবি শামীম রেজা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
এসকেবি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।