ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিস্মৃতির আড়ালে রাজধানীর একুশের স্মারক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
বিস্মৃতির আড়ালে রাজধানীর একুশের স্মারক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের গেটের সামনের ফলকটি এখন আর নজরে পড়ে না।

ঢাকা: ঢাকায় নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারে ভেঙে ফেলার মাধ্যম পাকিস্তানি শাসকরা মুছে ফেলতে চেয়েছিল ভাষা আন্দোলনের প্রধানতম স্মারকটি। পরবর্তীকালে নির্মিত বর্তমান শহীদ মিনার এখনও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাকিস্তানিরা অধিকাংশ স্মারক মুছে ফেলতে না পারলেও সেটা পেরেছি আমরা!

রাজধানীর বুকে ছড়িয়ে থাকা একুশের অমর স্মৃতিস্মারকগুলো হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির আড়ালে। উন্নয়নের বাহানায়, অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে গেছে একুশের স্মৃতি স্মারকগুলো।

ভাষা সংগ্রামী ও গবেষকরা বলছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে একুশের স্মৃতি স্মারকগুলো এখন শুধুই বইয়ের পাতায়। তাদের দাবি ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্মৃতিচিহ্নগুলোর সামনে অন্তত একটি ফলক স্থাপনের। যাতে নতুন প্রজন্ম একুশের ইতিহাস জানতে পারে।

একুশের বেশিরভাগ স্মৃতিচিহ্নই উন্নয়নের বার্তা দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবেহলায় হারিয়ে গেছে আমতলা, বেলতলা, ১৪৪ ধারা ভঙ্গের গেটের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা। যে নীলক্ষেত ব্যারাকে সরকারি কর্মচারীরা প্রতিবাদ করেছিলেন, সেখানে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন। কিন্তু এ ইতিহাসের খোঁজ জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।  ১৪৪ ধারা ভঙ্গের গেটের সামনের ফলকটি এখন আর নজরে পড়ে না। আওয়ামী লীগের ৯৪ নবাবপুর ও ১৫০ মোগলটুলীর কার্যালয়টি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সংরক্ষিত হয়নি। জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনোমতে টিকে আছে নবাবপুরের ভবনটি। কিন্তু মোগলটুলীর ভবনটি নিজ চরিত্র হারিয়ে এখন বহুতল মার্কেট। সংরক্ষণের সহজ উপায় থাকা সত্ত্বেও একুশের প্রথম বই ও প্রথম সংকলন এখন আর পাওয়া যায় না। এমন শত স্মৃতিস্মারক হারিয়ে গেছে রাজধানী থেকে। যা বহন করেছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।

এ প্রসঙ্গে ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক বাংলানিউজকে বলেন, জাতি হিসেবে আমরা ঐতিহ্যকে মর্যাদা বা সম্মান দিতে পারি না। যার কারণেই একুশের স্মৃতিস্থানগুলো আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় একুশের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম স্মৃতিস্থানগুলো ছিল। কিন্তু তাদের ব্যর্থতার কারণে সেগুলো সংরক্ষিত হয়নি।

‘যদি একটি ফলক স্থাপন করা যেত, তাহলেও মেনে নেওয়া যেত। কারণ, ওই ফলকে ছোট্ট করে হলেও ইতিহাসের বর্ণনা থাকতো। যার ফলে নতুন প্রজন্ম একুশের সঠিক ইতিহাস জানতো পারতো। ’

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয় না। লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভবন, কবি-সাহিত্যিকদের মতো বিশিষ্টজনদের বাসভবনের সামনে ফলক স্থাপন করা থাকে। যাতে সেই বাড়িটি বা ব্যক্তির সম্পর্কে ছোট্ট একটি ইতিহাস লেখা থাকে। আমাদের এখানে চাইলে এখনও এ ফলক স্থাপন করা সম্ভব। তাহলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারতো।
ভাষা আন্দোলন গবেষক ও ভাষা আন্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদের সভাপতি এম আর মাহবুব বলেন, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন একটি জাতির গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের শিকড় এবং কালের সাক্ষী হিসেবে পরিচিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত অধিকাংশ স্থান, স্থাপনা ও স্মারকগুলো আজ বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
ডিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।