এই এলাকায় হামে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে যেমন চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে তেমনি কর্মহীনদের মুখে আহার তুলে দিতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
এই এলাকার অনেকগুলোর সমস্যার মধ্যে প্রধান কয়েকটি সমস্যা হলো- সরকারি নির্দেশনা মেনে চিকিৎসকরা কঠিন পথ মাড়িয়ে হামসহ নানা রোগের চিকিৎসা দিতে ঘটনাস্থলে গেলেও স্থানীয়দের কুসংস্কারে বিশ্বাসের কারণে তাদের সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।
অপরদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে হাট-বাজার বন্ধ থাকায় এসব এলাকার মানুষেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না। যে কারণে পুরো এলাকায় বেশিরভাগ লোক বেকার হয়ে পড়েছেন। খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাজেকে ১৭৪টি গ্রাম রয়েছে। সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পাড়া পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। এই সড়কের আশপাশে রয়েছে ৩৫টি গ্রাম। এসব গ্রামের লোকজনের যাতায়াতও সড়ক পথে।
বাকি ১৩৯টি গ্রাম দুর্গম এলাকা। যেখানে অধিকাংশ গ্রামের লোকজনকে যাতায়াত করতে হয় পায়ে হাঁটা রাস্তা দিয়ে। তবে নৌ-পথের যোগাযোগও রয়েছে কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে।
মূল সড়ক পথে যেসব গ্রাম রয়েছে সেসব বাসিন্দারা সরকারি ত্রাণের সহায়তা পেলেও প্রায় ১৩০ গ্রামে সাত হাজারেরও মতো মানুষ ত্রাণ বঞ্চিত। এর মধ্যে উদলছড়ী, নতুন জপ্পই, শান্তি পাড়া, নিউ থাংনাং, তারুম পাড়া, কজৈছড়ি, ৯ নম্বর ত্রিপুরা পাড়া, ভুয়াছড়ি, মন্দিরাছড়া, রতনপুর, হালিম পাড়া, লংকর ডেবাছড়া, ভূইয়াছড়া গ্রাম উল্লেখযোগ্য।
আরও জানা যায়, সাজেকের অধিকাংশ গ্রামসহ ১৩০টি গ্রামের লোকজনের প্রধান পেশা হচ্ছে জুম চাষ ও কৃষি। গ্রামের লোকজন উৎপাদিত কৃষি পণ্য মাচালং বাজার, উজো বাজার, বাঘাইহাট বাজার ও ভূয়ছড়ি গ্রাম্য বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে হাট-বাজার বন্ধ থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ১৩০টি গ্রামের লোকজন। ঘরে বসে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সড়ক ও নৌ-পথের আশপাশের এলাকা ছাড়া দুর্গমতার কারণে যুগ যুগ ধরে সাজেকের অধিকাংশ গ্রাম সরকারি-বেসরকারিভাবে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত।
বেটলিং এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য ডহেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি গ্রামে ২৪৫টি পরিবার রয়েছে। তারা কেউ সরকারি বেসরকারি ত্রাণ বা সহায়তা পাননি। তবে কিছুদিন আগে বেটলিং এলাকায় হামে আক্রান্ত ২০ জন শিশুর পরিবারের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হয়।
সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা বলেন, সাজেকে প্রায় আট হাজার পরিবার রয়েছে তার মধ্যে দেড়শ পরিবারের মত রয়েছে উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার বাকি সবাই নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র পরিবার। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া ৭ থেকে ৮শ পরিবারের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও ১৭৪টি গ্রামের মধ্যে ১৩০টি গ্রামে কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি।
তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৬ মেট্রিক টন চাল পেয়েছি এবং জেলা পরিষদ থেকে ১শ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়। এছাড়াও জেলা পরিষদ থেকে আরো ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো এসে পৌঁছাবে।
তবে এলাকার হতদরিদ্র পরিবার বেশি হওয়ায় চাহিদার তুলনায় স্বল্প ত্রাণ সহায়তা সবাইকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই জরুরি ভিত্তিতে সাজেকের ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবিব জিতু বলেন, কর্মহীনদের সহায়তার জন্য প্রথম পর্যায়ের সমগ্র বাঘাইছড়ি উপজেলায় ইতোমধ্যে ২৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে সাজেক ইউনিয়নে ৬ মেট্রিক টন চাল ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ৬শ পরিবারকে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকৃত কর্মহীন যারা ত্রাণ পাননি আমরা তাদের তালিকা করছি এবং জেলা প্রশাসনের কাছে তালিকা পাঠাচ্ছি। বরাদ্দ আসলে শিগগিরই পর্যায়ক্রমে সবাইকে সহায়তা দেওয়া হবে বলে যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২০
আরএ