বর্তমানে ৩০ টাকার স্বর্ণা ও পাইজাম জাতের ধানের চাল মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
রোববার (১৯ এপ্রিল) কুষ্টিয়া পৌর বাজারে অধিকাংশ দোকানেই ছিল না মোটা চাল। দু-একটি দোকানে কাজললতা ও পাইজাম ৪৮ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে। দেশের নিম্নআয়ের মানুষ এসব চালের প্রধান ক্রেতা।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে কর্ম হারিয়ে ঘরবন্দি নিম্নআয়ের মানুষ দিশেহারা। ঠিক সেই মুহূত্বে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা আরো সংকটের মধ্যে পড়েছেন।
কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, চাল দিতে পারছি এটাই বড় কথা, দাম দেখে লাভ নেই।
কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন সুখনগর বস্তির বাসিন্দা কলা বিক্রেতা রবি জানান, প্রায় এক মাস ধরে তাকে বসতে দিচ্ছেন না। উপার্জন হারিয়ে দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন। ব্যবসার একমাত্র পুঁজি ৬ হাজার টাকা কাছে ছিল। একমাস বসে খেয়ে সব টাকা প্রায় শেষ।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ৩৫ টাকা কেজি দামে চাল কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই একই চাল আজকে ৪৮ টাকা কেজি দাম চাচ্ছেন। কিভাবে সংসার চালাবো আর ভেবে পাচ্ছি না।
কালিশংকরপুর এলাকার কাঠ মিস্ত্রি মাহবুব বলেন, বড় লোকের চালের দাম বাড়েনি, দাম বেড়েছে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের চালের। একদিকে করোনার কারণে কর্ম হারিয়ে ঘরে বন্দি হয়ে করুণ অবস্থায় জীবনযাপন করছি। অন্যদিকে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় না খেয়ে মরা ছাড়া আর উপায় নেই।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে সবচেয়ে বেশি মোটা চাল উৎপাদন করেন স্বর্ণা অটো রাইস মিল ও সুবর্ণা এগ্রো ফুড। এছাড়া জেলার আরো প্রায় ৩৪টি অটো মিল কমবেশি মোটা চাল উৎপাদন করে। সবচেয়ে বেশি মোটা চাল উৎপাদন করেন জেলার প্রায় তিন শতাধিক হাসকিং রাইস মিল। তবে এসব হাসকিং মিল মালিকদের গুদামে বর্তমানে একবস্তা চালও মজুদ নেই। যা চাল আছে সুবর্ণা ও স্বর্ণা অটো রাইস মিলে।
আলিফ-মীম হাসকিং রাইস মিলের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসকিং মিল মালিকদের কোনো পুঁজি নেই। কোনো রকম ধুকে ধুকে চলছে মিলগুলো। তাই ধান অথবা চাল মজুদ করার কোনো ক্ষমতা নেই। ধান কিনে চাল উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাজারে বিক্রি করতে হয়। তা না হলে পরের চালানে ধান কেনা সম্ভব হয় না।
একাধিক মিল মালিক জানান, স্বর্ণা ও সুবর্ণা অটো রাইস মিলে এক হাজার টনের উপরে মোটা চাল মজুদ ছিল। কিছুদিন আগেও তারা মিলগেটে মোটা স্বর্ণা চাল ৩০ টাকা ও মাঝারি পাইজাম ৩৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে সেই চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি করছেন। তাও সবার কাছে চাল বিক্রি করছেন না। বলছেন মোটা চালের মজুদ নেই।
কুষ্টিয়া জেলা অটো ও হাসকিং চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ও স্বর্ণা রাইস মিলের মালিক আব্দুস সামাদ বলেন, চাল দিতে পারছি এটাই বড় কথা, দাম দেখে লাভ নেই। বর্তমানে বাজারে মোটা জাতের কোনো ধান নেই। এই দামে বিক্রি করেও আমাদের লোকসান হচ্ছে। মিলে কোনো মোটা চাল মজুদ নেই। দুইদিন আগে ৪০ টাকা কেজিদরে পাইজাম চাল বিক্রি করেছিলাম। এই চাল ১০ দিন আগে কত দামে বিক্রি করেছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ১০ দিন আগে আমার মিলে কোনো চাল ছিল না।
কুষ্টিয়ার পৌর বাজারের বড় চাল বিক্রেতা স্বপন বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও তারা মোটা চাল ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে সেই সব চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। এসব দামেও মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। আমার দোকানেও মোটা কোনো চাল নেই। বাজারের অধিকাংশ দোকানেই মোটা চাল নেই।
একই বাজারের ব্যবসায়ী আব্বাস বলেন, চাল চাইলে মিল মালিকেরা বলেন, মোটা চাল নেই। এ কারণেই বাজারে মোটা চালের সংকট দেখা দিয়েছে এবং দামও বেড়েছে।
এদিকে সাধারণ এসব নিম্নআয়ের মানুষের দাবি অসাধু মিল মালিকরা এসব চালের সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ায়। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। সেই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২০
আরএ