শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) সকালে এসব কথা বলছিলেন গেন্ডারিয়া এলাকার রিকশাচালক আনোয়ার মিয়া। বছর দশেক আগে শরীয়তপুর থেকে ভাগ্য অন্বেষণে ঢাকায় আসেন তিনি।
বললেন, ‘মাইনষে কত কিছু কইতো। ঢাকা শহরে নাকি টাকা উড়ে। কিন্তু দশ বছর ধরে পা দিয়ে রিকশা ঠেইল্যা পেটে ভাত জুটাইতে হইছে। এর মধ্যে আবার করোনা বন্ধ। গত এক মাস ধরে তো প্যাসেঞ্জারই নাই। কোনো মতে ডাল-ভাত খেয়ে টিকে আছি। এমন চললে কোনো মানুষই আর আইন মানবো না। পেটের ভুখে ঘর থেকে বাইর হইয়া যাইবো গা। ’
রিকশাচালক আনোয়ারের মতোই খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত মানুষও এখন সীমিত আকারে লকডাউন শিথিলের দাবি জানাচ্ছেন। গত এক মাস সব কিছু বন্ধ থাকায় জমানো টাকায় হাত পড়তে শুরু করেছে মধ্যবিত্তদের। আর যারা স্বল্প পুঁজির ব্যবসা করতেন, তাদেরও মাথায় হাত।
গেলো বছরের সেপ্টেম্বরে ইসলামপুরে স্বল্প পুঁজি নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন ফরিদাবাদের বাসিন্দা আবদুর রব। এবারের রোজার ঈদটাতেই তার প্রাথমিক পুঁজি তুলে আনার পরিকল্পনা ছিল।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ছোট একটা চাকরি করতাম। কিন্তু অন্যের অধীনে কাজ করতে ভালো না লাগায় গত বছর গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করছিলাম। রোজার ঈদে সেই পুঁজি তুলে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনা এসে সব শেষ করে দিলো। এখন আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও লকডাউন তুলে ফেলা দরকার। না হলে না খেয়ে মরে যাবো। ’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আদিল খানের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। বললেন, ‘এ এপ্রিল-মে মাস ঘিরে কত পরিকল্পনা ছিল। বেতন আর বোনাস মিলিয়ে বউ-বাচ্চাসহ আত্মীয়স্বজনদের নতুন পোশাক কিনে দেবো। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। এক মাস ধরে অফিস বন্ধ। কী হবে কিছুই বুঝতেছি না। বাচ্চারে নতুন জামা দিতে পারবো কিনা কে জানে। ’
তিনি বলেন, ‘জানি ঘরে থাকাটাই করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়। কিন্তু ঘরে থাকতে থাকতে সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এখন সীমিত আকারে হলেও সব কিছু খুলে দেওয়া দরকার। ’
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় সাধারণ ছুটি আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল এবং পরে ৫-৯ এপ্রিল, পরে ১৪ এপ্রিল এবং সবশেষ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
ডিএন/এফএম