করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে পুরো উপজেলা লকডাউন হওয়ায় নদী পাড়ের মানুষগুলো ঘর থেকে এমনিতেই বের হতে পারছেন না। বন্ধ রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তাঁত কারখানা।
জানা যায়, খুকনী, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের যমুনা নদী তীরবর্তী পাঁচ কিলোমিটার এলাকা গত কয়েক বছর ধরেই ভাঙনের কবলে পড়েছে। বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়েছে এসব ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, পাকুরতলা, আরকান্দি, বাঐখোলা, ঘাটাবাড়িম ভেকা, পুটিপাড়া, জালালপুর, ভেকা হাট পাচিল ও চিলপাড়াসহ ১০ গ্রামের মানুষ। অব্যাহত ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামগুলো। চলতি বছর শুষ্ক মৌসুম থেকেই ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিনদিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এতে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষগুলো।
নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আলমগীর হোসেন, সাহেরা খাতুন, মোমেনা খাতুন, আকবর আলী, আল-আমিন আমিরুল ইসলাম, হামিদ আলী, জসিম উদ্দিন ও এমদাদ আলীসহ অনেকেই বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর এখনও অনেক দেরি। এখনই যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে আমরা চরম আতঙ্কে আছি। এভাবে চলতে থাকলে বর্ষা মৌসুমে বিলীন হয়ে যাবে গ্রামগুলো।
এদিকে করোনার কারণে উপজেলা লকডাউন হওয়ায় আমরা বাইরে বের হতে পারছি না। কোনো কাজ-কর্মও করতে পারছি না। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে আমাদের।
স্থানীয়রা বলেন, করোনা এসেছে, আবার চলেও যাবে। কিন্তু নদীভাঙনে যদি বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায় সেটা আর ফিরে আসবে না। করোনার চেয়ে যমুনাই আমাদের বড় আতঙ্ক।
খুকনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁন বলেন, এনায়েতপুরের আরকান্দি ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে শুরু করে যমুনার পশ্চিম তীরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরেই। গত তিনদিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। এই এলাকার মানুষগুলো অসহায় অবস্থায় রয়েছে। আমরা সরকারিভাবে যে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছি তা ভাঙন কবলিত মানুষদের পৌঁছে দিচ্ছি। তবে সেটা একেবারেই অপ্রতুল।
জাললপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, একদিকে করোনা অপরদিকে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। তীরবর্তী মানুষগুলো অনেকটাই বেকার অবস্থায় রয়েছেন। এ জন্য খাদ্য সহায়তার চাহিদা বেশি। আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার থেকে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং শুরু হয়েছে। এছাড়াও ভাঙনরোধে প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প পাশ হলেই এ অঞ্চলে ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
আরএ