ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেই দীর্ঘমানব জিন্নাত আলী আর নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
সেই দীর্ঘমানব জিন্নাত আলী আর নেই

কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘমানব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কক্সবাজারের রামু উপজেলার সেই জিন্নাত আলী (২৪) আর নেই।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ভোর পৌনে ৪টায় তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।  

রামুর গর্জনিয়ার ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের বর্গা চাষি আমীর হামজার ছেলে জিন্নাত আলী।

এক মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে জিন্নাত আলী তৃতীয় ছিলেন।  

জিন্নাত আলীর বড় ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াছ জিন্নাতের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, জিন্নাত দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কে টিউমারজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এছাড়া তার ডায়বেটিসও ছিল। কয়েকদিন আগে শারীরিকভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত রোববার (২৬ এপ্রিল) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমে নিউরোলজি বিভাগে পরে নিউরোসার্জারি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে  আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখানে মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে অন্য সবার মত জিন্নাতের গড়নও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ওর বয়স যখন ১২ বছর, সে সময় থেকেই দ্রুত উচ্চতা বাড়তে থাকে। প্রতিবছর ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে লম্বা হতে থাকেন তিনি। ১০ বছরের মধ্যে প্রায় ৪ ফুট উচ্চতা বেড়ে জিন্নাত ৮ ফুট ২ ইঞ্চির এক দীর্ঘ মানব হয়ে যায়।  

রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, জিন্নাত আলীর মাথায় টিউমারের বিষয়টি জানাজানি হলে ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে সংসদ ভবনে নিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন।

এসময় তাৎক্ষণিকভাবে জিন্নাতের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকায় ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর জিন্নাত আলীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ জিন্নাত আলীর চিকিৎসা করেন।

তিনি আরও জানান, ওই সময় হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসাসেবা গ্রহণের পর চিকিৎসকেরা তার মাথার টিউমার অপারেশনের উদ্যোগ নিলে বেঁকে বসেন জিন্নাত ও তার পরিববারের সদস্যরা। তাদের ধারণা ছিল অপারেশন করলেই জিন্নাত মারা যাবে। তাই অপারেশন না করেই একপর্যায়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।

শুধু তাই নয়, তার জীবিকা নির্বাহ এবং বাসস্থানের ব্যবস্থাও করেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন পাঁচ লাখ টাকার অনুদান। এর পরপরই তাকে দেওয়া হয় একখণ্ড জমি, জমিতে তৈরি একটি পাকা দোকান ও মালামাল কেনার টাকা।  

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসন জিন্নাত আলীর জন্য গর্জনিয়া বাজারে একখণ্ড (০.০০৩৮ একর) জমি বন্দোবস্ত দেয়।

২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল সেই জমির ওপর নির্মিত আধাপাকা দোকানঘরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। এ সময় দোকানঘরের পাশাপাশি জমির ডিসিআর ও দোকানের সামগ্রী জিন্নাত আলীকে হস্তান্তর করা হয়।  

গর্জনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি হাফেজ আহমদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামে  জিন্নাতের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা নামাজে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলসহ বিশিষ্টজনদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
এসবি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।