ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অন্যরকম র‌্যাব কর্মকর্তা, যার অপেক্ষায় অসহায়দের রাত জাগা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৯ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২০
অন্যরকম র‌্যাব কর্মকর্তা, যার অপেক্ষায় অসহায়দের রাত জাগা বামে খাদ্যসামগ্রীর জন্য অপেক্ষারতরা, ডানে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অসহায় মানুষের দুয়ারে র‌্যাব-১১ এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন।

ঢাকা: জঙ্গি ও অপরাধীদের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম পুলিশের বিশেষ ইউনিট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১১) কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। অপরাধ দমনে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন।

করোনা দুর্যোগকে ঘিরে র‌্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনকে ভিন্নরূপে দেখছেন তার কর্মস্থলের বাসিন্দারা। দিনভর নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সেরে রাত হলেই খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছুটে চলেছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।

এই তালিকায় বাদ যাচ্ছেন না সমাজের পিছিয়ে থাকা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কিংবা অন্ধ-পঙ্গু ছিন্নমূলের মানুষও।

করোনা ভাইরাসের হটস্পট নারায়ণগঞ্জে ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক র‌্যাব সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। টিমের অনেক সদস্য আক্রান্ত হলেও থেমে নেই র‌্যাব-১১ কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের কর্মযজ্ঞ। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

এই করোনা দুর্যোগে সত্যিকারের যেসব মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছাতেই রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি ছুটে চলেছেন বলে জানান আলেপ উদ্দিন। কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাত গভীর হলে এখন বিপুল সংখ্যক মানুষ পথে পথে অপেক্ষা করেন এই কর্মকর্তার জন্য। ফলে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও অপেক্ষমান এসব মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন তিনি।

রাতেই কেন খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন জানতে চাইলে আলেপ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দিনের বেলায় সাধারণত আমাদের নিয়মিত অফিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকতে হয়। এছাড়া রাতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি ভালোভাবে মেনটেইন করা যায়। যাদের ঘরে খাবার থাকে, তারাতো আর না খেয়ে রাত জেগে রাস্তায় বসে থাকছেন না। যার আসলেই খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছাতেই সবকিছু বিবেচনায় রাতকে বেছে নিয়েছি।

প্রথম প্রথম আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। বাড়ি-ঘরের বাইরে থেকে দেখলেতো ওই ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নআয়ের মানুষ দেখে সে অনুযায়ী সহায়তা করেছি। কিন্তু ইদানীং দেখছি রাত হলে অনেকেই রাস্তায় বসে থাকছেন। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক যতক্ষণ তাদের কাছে না যাচ্ছি, ততক্ষণ ওই মানুষগুলো অপেক্ষা করছেন।

কোনো পেশাগত অর্পিত দায়িত্ব নয়, বরং নিজের মানবিক বোধ থেকেই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তবে এই কর্মযজ্ঞে তার কিছু বিত্তবান বন্ধুরাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলতে কার্পণ্য করেননি র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

প্রথম থেকে তার কর্মযজ্ঞে থাকা টিমের একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এতেও দুশ্চিন্তা বা ভয়ে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশমাতৃকার জন্য কাজ করার শপথ নিয়েই পুলিশে যোগ দিয়েছি। কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলে হতেই হবে। তারপরেও যতটুকু সতর্ক থাকা সম্ভব থাকার চেষ্টা করছি। নিজে আক্রান্তের চিন্তা করেতো অসহায় মানুষকে এড়িয়ে যেতে পারি না।

তিনি সাধ্যমতো এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।   একইসঙ্গে সবাইকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের জন্য কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৯ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২০
পিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।