সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় এ ফ্লাইওভার ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে। এমন আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পিপিপি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ (উড়াল সড়ক)।
৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে মিলিত হবে। তখন ঢাকার জটলা কমবে আরো। এমন জনকল্যাণমুখী পিপিপি প্রকল্প আরো বাড়াবে সরকার।
পর্যায়ক্রমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিপিপি) প্রকল্পের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি বেশি নেওয়া হবে জনকল্যাণমুখী প্রকল্প। বাস্তবায়ন গতি বাড়িয়ে জনগণকে দ্রুত সময়ে প্রকল্পের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ।
২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৬৭৭টি। এর মধ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প ৬১টি। ফলে মোট এডিপিভুক্ত প্রকল্পের মাত্র ৪ শতাংশ পিপিপি প্রকল্প। যদিও গত অর্থবছরের থেকে ২১টি প্রকল্প বেড়েছে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজ বাংলানিউজকে বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন ১০টি সংস্থার ৬১টি পিপিপি প্রকল্প রয়েছে। বিগত বছরের মতো এবারও এডিপি প্রনয়ণ নির্দেশিকায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৩০ শতাংশ প্রকল্প পিপিপি ভিত্তিতে গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
‘তালিকাভুক্ত এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই নতুন প্রকল্প যা বাস্তবায়নে পিপিপি কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। তাছাড়া কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের উন্নয়ন চিন্তায় ভৌত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে পিপিপিভিত্তিতে বিনিয়োগের উদ্যোগ প্রয়োজন। পিপিপি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ’
সচিব সুলতানা আফরোজ আরো বলেন, পিপিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি বাড়ানো হবে। দ্রুত সময়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানো হবে। প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করলে ব্যয় কমবে। আগামী ৫ বছরের জন্য তৈরি হতে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও পিপিপিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এডিপির বিনিয়োগ প্রকল্পের ৩০ শতাংশ পিপিপিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কেবল সরকারি তহবিলের অর্থ নয়, বেসরকারি অংশগ্রহণও বাড়াতে চায় সরকার। সেই তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে পিপিপি প্রকল্প সংখ্যা বাড়ানো হলো না।
পিপিপি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প পরিবহন খাতের। এর মধ্যে অন্যতম ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, গাবতলী-নবীনগর মহাসড়ককে অ্যাকসেস কন্ট্রোল সড়কে উন্নীত করা, ঢাকা সার্কুলার রুট: দ্বিতীয় অংশ (আব্দুলাহপুর-ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-বাবুবাজার-চাষাড়া-সাইনবোর্ড) পর্যন্ত ৬৭ কিলোমিটার, দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করা এবং দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১৩৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পগুলো।
এসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ১৯ মার্চ এনইসি বৈঠকে সংশোধিত এডিপি অনুমোদনের পর লকডাউন শুরু হওয়ায় এসব প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই। সে কারণেই আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এই প্রকল্পগুলো যুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্ব বা পিপিপি উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ১০টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো হলো- জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্প বিষয়ক রুলস, পিপিপি সংক্রান্ত সিরিজ প্রশিক্ষণ, বোর্ড অব গভর্নরের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, নির্বাহী বোর্ডের সদস্যদের জন্য বিশেষ প্রকল্প রিভিউ সভা, পিপিপি টিএএফ ফান্ডে অর্থ হস্তান্তর, পিপিপি প্রকল্পের জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পিপিপি আইন-২০১৫ সংশোধন, বাংলাদেশ জাপান জিটুজি পার্টনারশিপ হালনাগাদকরণ, প্রকল্পের সমন্বয়করণ ও পরিচালনে গুরুত্ব, এডিপিতে ৩০ শতাংশ প্রকল্প পিপিপিতে গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২০
এমআইএস/এএ