এ অবস্থা শুধু নেবুবুনিয়ায় নয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া সাতক্ষীরা উপকূলের শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহর মধ্যেও ভাঙনকবলিত এসব বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হওয়ায় জোয়ারের পানিতে এলাকার মিষ্টি পানির পুকুরগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পায়খানা ঘরগুলো।
সাতক্ষীরা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সাতক্ষীরা উপকূলের ৭১৯টি নলকূপ, ১৯৬০টি ল্যাট্রিন, ৪৩টি মিষ্টি পানির পুকুরসহ পিএসএফ অকেজো হয়ে পড়ে। এতে গাবুরার নেবুবুনিয়া ও নাপিতখালী, পদ্মপুকুরের ঝাপা, কামালকাটি, পশ্চিম পাতাখালী, ছোট পাতাখালী, বড় পাতাখালী, বুড়িগোয়ালিনীর দুর্গাবাটি, দাতিনাখালী, পোড়াকাটলা, ভামিয়া ও কলবাড়ি প্রতাপনগরের চাকলা, শুভদ্রকাটি, শ্রীউলার হাজরাখালী, কৃষ্ণনগরের কালিকাপুর, কাশিমাড়ির ঘোলা, আশাশুনি সদরের দয়ারঘাটসহ গোটা জেলার অন্তত ৫০টি গ্রামে খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে এসব গ্রামের ল্যাট্রিনগুলো ভেসে গেছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষকে ক্ষেত্র বিশেষে ১ থেকে ৪ কিলোমিটার দূর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বিধ্বস্ত হয় মানুষের ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়ে যায় মিষ্টি পানির পুকুরগুলো। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় পায়খানা ঘরগুলো। এতে এলাকার মানুষ তীব্র সংকটে পড়েছে। ইতোমধ্যে চুলকানিসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আইলার পর মানুষ পুকুরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পানি পান করতো, সে সুযোগও এখন নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খাবার পানির তীব্র হাহাকার চলছে।
উপকূলে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা লিডার্স-এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, উপকূলীয় এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ কিছু বেসরকারি সংস্থা খাবার পানি সরবরাহ করছে। কিন্তু দূরবর্তী ইউনিয়নে এই পানি পৌঁচ্ছাছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খাবার পানির সংকট দূরীকরণে তিনটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া প্লাবিত এলাকায় সুবিধা মতো জায়গায় অস্থায়ী ল্যাট্রিন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুর্গম এলাকায় খাবার পানি সরবরাহসহ অন্যান্য কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) আরশেদ আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় আপম্পান উপদ্রুত এলাকায় খাবার পানির সংকট দূরীকরণে চারটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ডুবে যাওয়া টিউবওয়েলগুলো উঁচু করে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৪০টি টিউবওয়েল উঁচু করে দেওয়া হয়েছে, ৩২২টি মেরামত করে দেওয়া হয়েছে ও ৪৮২টি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৫ হাজার জারিকেন ও সাতশ হাইজিন কিটস বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিউবওয়েলগুলোর প্লাটফর্ম ৩-৪ ফুট উঁচু করে দেওয়ার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে প্লাবিত এলাকায় খাবার পানির সংকট দূরীকরণে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা বারসিক, সুশীলন, লিডার্স, ড্রিম লাইটারসহ বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
টিএ/এইচজে