ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা মানে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
‘শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা মানে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া’ ফাইল ছবি

ঢাকা: ‘দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি নিয়ে কাজ করছে। কারখানার অর্ডার বাতিল হয়েছে। এ অবস্থায় শতভাগ শ্রমিক নিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে চলতি মাস (জুন) থেকেই শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে- বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হকের এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন শ্রমিক নেতারা।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, সরকার, মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক করোনা ভাইরাস মহামারিতে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না, কোনো কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হবে না। মালিকপক্ষ এসব কথা সভায় মেনে নিলেও ঈদের আগেই তারা তাদের কথা ভঙ্গ করেছে।

হাজার হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে, অনেক কারখানায় লাখো শ্রমিকের বেতন-বোনাস হয়নি। করোনায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কথা মানে আগুনে ঘি বা পেট্রোল ঢেলে দেওয়ার মতো।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্যে এ শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হবে। শ্রমিক অসন্তোষের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার বিজিএমইএ ও বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হককে নিতে হবে বলে জানান শ্রমিক নেতারা।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু বাংলানিউজকে বলেন, বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্য ন্যাক্কারজনক। করোনাকালীন সময়ে কারখানা মালিকরা শ্রমিক ছাঁটাই করবে না, কারখানা লে অফ করা হবে না, এমন ঘোষণা দিয়েছিলো। তখনও হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন যে বক্তব্য বিজিএমইএ সভাপতি দিয়েছেন, সেটা অন্যায়, তার বক্তব্যে প্রত্যাহার করা উচিত ও মালিকপক্ষের আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা উচিত। আমরা বিজিএমইএ’র বক্তব্যে মর্মাহত হয়েছি। বিজিএমইএ’র আগের ঘোষণা মালিকরা শুনেনি তারা হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন। এখন তারা লাখ লাখ শ্রমিক ছাঁটাই করবে।

প্রবীণ শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, গত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বলা হয়েছিলো, করোনাকালে কোনো ছাঁটাই করা হবে না। করোনার মধ্যেও শ্রমিকরা জীবন বাজি রেখে কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কাজ করেছেন। কিন্তু ড. রুবানা হক যেটা বলেছেন সেটাতে শ্রমিকরা মর্মাহত। আগুনে ঘি বা পেট্রোল ঢেলে দেওয়ার মতো।

আবুল হোসাইন বলেন, বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্যে এ শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হবে। শ্রমিক অসন্তোষের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার বিজিএমইএ ও বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হককে নিতে হবে। আজও ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়েছে। মালিক পক্ষের বক্তব্য শিল্পের অস্থিরতা তৈরি হলে এর দায়ভার বিজিএমইএ ও বিজিএমইএ সভাপতিকে নিতে হবে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আইন আছে, আমি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণার নিন্দা জানাই।

এর আগে বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) গাজীপুর চন্দ্রায় বিজিএমই’র কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি নিয়ে কাজ করছে। কারখানার অর্ডার বাতিল হয়েছে। এ অবস্থায় শতভাগ শ্রমিক নিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে চলতি মাস (জুন) থেকেই শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে।

তিনি জানান, পোশাক শ্রমিকদের জন্য তহবিল গঠন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বসা হবে। তবে এ সময়ের মধ্যে (জুনে) যাদের চাকরি যাবে তাদের বিষয়ে বিজিএমইএ কোনোও ব্যবস্থা নেবে না। তবে এপ্রিল ও মে মাসে যেসব শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন তাদের বিষয়টি আমরা দেখবো।

তিনি আরও বলেন, বুধবার (৩ জুন) রাত পর্যন্ত ২৬৪ জন শ্রমিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সবাই চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন, চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করছে কারখানা মালিক।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০
ইএআর/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।