ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৌসুমী ফলের উৎপাদন ভালো হলেও হতাশ কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
মৌসুমী ফলের উৎপাদন ভালো হলেও হতাশ কৃষক

রাঙামাটি: রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা পর্যটন শহর হিসেবে সারাদেশে আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে। এর সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য পর্যটকের ঢল নামে এই উপজেলায়। মৌসুমী ফলের জন্যেও এ উপজেলার আলাদা কদর রয়েছে। তাই পর্যটকরা যখনই এ উপজেলা ভ্রমণ করেন তখনই সুস্বাদু নানারকমের মৌসুমী ফলের স্বাদ গ্রহণ করে থাকেন।

করোনার কারণে সারাদেশের মতো এ উপজেলাতেও পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফলের বেশিরভাগ ক্রেতাই পর্যটক।

তাই এ বছর পর্যটক না আসায় ফল ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। লাভের মুখ দেখেনি তারা। পাশাপাশি কৃষকরাও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় উৎপাদিত ফলনের খরচ উঠিয়ে নিতে পারেননি। যে কারণে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলা সদরের বরইছড়ি এলাকার ফল বিক্রেতা মো. দুলাল বাংলানিউজকে বলেন, টানা ১৫ বছর ধরে এই এলাকায় ফলের ব্যবসা করি। বিশেষ করে জৈষ্ঠ্য মাস অথাৎ মধুমাসে দম ফেলার ফুসরত পাই না। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস কেনার জন্য দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। প্রতিদিন হাজার দশেক টাকা বিকিকিনি করি। কিন্তু এ বছর হাত গুটিয়ে বসে আছি। ফল পচে যাচ্ছে, ক্রেতা নেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শহরটি পর্যটকবান্ধব শহর। প্রতিবছর এই সময়ে হাজার-হাজার পর্যটকের সমাগম হয় এখানে। পর্যটকরাই হলো মৌসুমী ফলের বড় ক্রেতা। তারা আমাদের দোকানে এসে ফল খায় এবং কিনে নিয়ে যায়। এ বছর পর্যটক নেই, বিক্রিও নেই।

একই এলাকার ফল ব্যবসায়ী মো. লিটন বাংলানিউজকে বলেন, এই বছর রুপালি, আম্রপালী, রাংঙ্গু এবং মল্লিকা জাতের আমের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এছাড়াও লিচু, কাঁঠাল, আনারসের উৎপাদনও ভাল হয়েছে। কিন্তু আমরা ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। কারণ বাজারে নেই ক্রেতা।  মনটাতে শান্তি পাচ্ছি না কীভাবে সংসারটা চালাবো।

ফল সাজিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় দোকানি।  ছবি: বাংলানিউজফল বিক্রেতা মো. বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর কেজি প্রতি আম ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হলেও এইবার ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার যে জাতের আমগুলো ৬০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হতো সেগুলো এইবার দাম কমে কেজিতে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।  করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যটক না আসায় তাদেরও এমন হাল হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

তালুকদার সবুজ খামারের সত্ত্বাধিকারী ও ওয়াগ্যা মৌজার হেডম্যান অরুন তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও তিনি তার বাগানে প্রায় ২০ একর জমিতে আম্রপালি এবং রাংঙ্গু জাতের আমের চাষ করেছেন। গত বছরের তুলনায় আম্রপালি জাতের আমের ফলন কম হলেও এ বছর রাংঙ্গু জাতের আমের ভালো ফলন হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যটক না আসায় এ বছর আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না বলে যোগ করেন।

কৃষক আপাই মারমা ও অজিত তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর করোনার কারণে বাইরের ক্রেতা কম আসায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফলন ভালো হলেও লাভের বদলে লোকশান গুনতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কাপ্তাই উপজেলার কর্মকর্তা সামসুল আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে এ বছর মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে।

প্রত্যেকটি গাছে পোকা মাকড়ের আক্রমণ ছাড়াই কৃষকরা আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুসহ নানা ফলের উৎপাদন করেছেন। তবে স্থানীয় বাজারে বেচাবিক্রি থাকলেও তেমন লাভ করতে পারছেন না। কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে যানবাহন সীমিত আকারে চলাচল করায় পর্যটক আগমন কমে গেছে। আর তাই এ বছর কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।