বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মোট শনাক্ত রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯৬ জন। সেই হিসেবে ৮২ শতাংশের মতো করোনায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালের দ্বারস্থ হননি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, যাদের করোনা শনাক্ত হচ্ছে তাদের কিছু রোগীর কোনো লক্ষণ থাকে না, কিছু রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে। আমরা এ ধরনের রোগীকে লক্ষণ অনুযায়ী মৃদু, মাঝারি, তীব্র, মারত্মক তীব্র- এ ধরনের চার থেকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করি।
তিনি বলেন, বরিশালে মৃদু ও মাঝারি অর্থাৎ নিউমোনিয়ার আগ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যাটা একটু বেশি। এক্ষেত্রে অনেক রোগীর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। শুধু শারীরিক পরিচর্যার প্রয়োজন, আবার কিছু আছে সামান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এসব রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সংখ্যাটা বেশি। আর বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া সুস্থ রোগীর সংখ্যাটাও বেশি।
তবে অভিযোগ রয়েছে, আক্রান্তদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বরিশালে নতুন শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ যদিও বলছে, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ওই রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে নিয়মনীতি ও চিকিৎসাপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তারা পালন করছেন। তবে আক্রান্ত রোগীদের বাসায় থাকা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে পর্যাপ্ত জনবল না দেওয়া হলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। তবে যে সব এলাকায় রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে সেখানে লকডাউন কার্যক্রম চলমান বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের ভোলা ও পিরোজপুর ছাড়া চার জেলায় ৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর গেলো ২৪ ঘণ্টায় ভোলা ও বরগুনা ছাড়া বাকি চার জেলায় ২৮ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন।
এদিকে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশি নাগরিকসহ ভিন্ন জেলা (সংক্রমিত) থেকে আগত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখার কার্যক্রম চলমান। ফলে গত ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ৬ জেলায় মোট ১৮ হাজার ৩৩৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় ১৬ হাজার ৬২৭ জনকে, আর এরমধ্যে ১৩ হাজার ৮১৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালে (প্রতিষ্ঠানিক) কোয়ারেন্টিনে ১ হাজার ৭০৬ জন রয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৩ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০ জন এবং এরইমধ্যে ৫০৭ জনকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুধু বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে মোট ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত। যারমধ্যে ২০ জন করোনা পজিটিভ রোগী ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বাংলানিউজকে জানান, বিভাগের মধ্যে এ পর্যন্ত বরিশাল জেলায় ৯৯৭ জন, পটুয়াখালীতে ১৯৬, ভোলায় ১৪০, পিরোজপুরে ১২৭, বরগুনায় ১৪০ ও ঝালকাঠিতে ১০১ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে গোটা বিভাগে ৪৪৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী সুস্থ হয়েছেন। যাদের এরই মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মৃত্যু হওয়া করোনা পজিটিভ ৩৪ জনের মধ্যে বরিশাল নগরসহ জেলায় ১৩ জন, পটুয়াখালীতে ১০ জন, ঝালকাঠিতে ৪ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, ভোলায় ২ জন ও বরগুনায় ২ জন রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
এমএস/এএ