সরকারি নির্দেশ মোতাবেক লকডাউন বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাস্তাবায়নকারী সংস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, কেউ লকডাউনের নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএসসিসি, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ওয়ারী এলাকার ১ বর্গকিলোমিটার জায়গায় লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। এলাকাটিতে ১৭৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে ওয়ারী অন্যতম। জনমানুষের বসবাসের পাশাপাশি এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী ওয়ারীর তুলনায় বেশি হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরামর্শ ও নির্দেশনায় ওয়ারী এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হচ্ছে। রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনীয় অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও রাখা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪১ নম্বর ওয়ার্ড ওয়ারী এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে। ওয়ারী এলাকার আউটার রোডগুলো হলো: টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন)। ইনার রোডগুলো হচ্ছে: লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যানকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশ মোতাবেক শনিবার ভোর ৬টা থেকে ওয়ারী এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো এই লকডাউন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যেসব দিক-নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো দিয়ে দিয়েছি। পুরো এলাকায় কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। লকডাউনের আওতায় যে নাগরিকরা থাকবেন, তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া হবে। খাবার, ওষুধ ও সহযোগিতা নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবে।
লকডাউন এলাকায় জরুরি পরিবহন যাতায়াতের জন্য দুটি গেট খোলা থাকবে, বাকি সব বন্ধ থাকবে। কেউ নিয়ম অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ওয়ারী এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। পুলিশ সেখানে তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। সাধারণত লকডাউন এলাকায় প্রবেশপথ এবং বহির্পথগুলো যাতে নিরাপদ থাকে সে বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। লকডাউন চলাকালে ওই এলাকার মানুষ যাতে ঘরে থাকে, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পুলিশের টহল টিম, মোবাইল টিম ও পেট্রোল টিম কাজ করবে। এছাড়াও পুরো এলাকায় পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও কাজ করবে। ঢাকা জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করেই পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, লকডাউনে এই এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী কর্মী এবং কাউন্সিলরের প্রতিনিধিরা থাকবেন, স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, সেটি আমাদের নজরদারিতে থাকবে। সেবাধর্মী কাজের মধ্যে যেমন কোন রোগীকে সহযোগিতা করা, কেউ মারা গেলে মরদেহ ডিস্পোজাল বা দাফন করাসহ বিভিন্ন কাজে পুলিশ নিয়োযিত থাকবে।
গত ৩০ জুন বিকেলে দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ওয়ারী এলাকা লকডাউনের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ৪ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারী এলাকা লকডাউন করা হবে। ২৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ২১ দিন লকডাউন কার্যকর থাকবে। এ সময়ে সেখানে সার্বিকভাবে সবকিছু বন্ধ থাকবে, শুধু ওষুধের দোকান খোলা থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০
এসজেএ/এমজেএফ