আবার বিগত ৩-৪ বছর ধরে যারা আসছে অধিকাংশই নর্থ সাইপ্রাস দিয়ে। তারা আছেন শরণার্থী হিসেবে।
এখানে যারা আগে স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছিলেন, তারা প্রত্যেকেই ভালো অবস্থানে আছেন বলা যায়। তাদের অধিকাংশই এক থেকে দুই হাজার ইউরো মাসে ইনকাম করেন। আবার অনেকেই হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সাইপ্রাসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা হাতে গোনা হলেও যারা ব্যবসায়ী আছেন তারা এখানে অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীদের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে আছেন।
যারা শরণার্থী হিসেবে এখানে দীর্ঘদিন ধরে আছেন তারাও বেশ ভালো আছেন বলা যায়। কিন্তু যারা বিগত দু'একবছর আগে সাইপ্রাসে এসেছেন তারা মোটেও ভালো নেই। কি শিক্ষার্থী, কি শরণার্থী, সবার একই অবস্থা।
কেউ কেউ পারমানেন্ট চাকরি পেলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি চাকরি নামক সোনার হরিণ। মাসে কখনো ৫ দিন, কখনো ১০ দিন কাজ করে তারা কোনভাবে খরচটা চালায়! আবার কখনো পুরো মাসে মিলে একদিনও কাজ মেলে না।
সামনে হয়তো সুদিন আসবে সে আশায় দিন কাটছিল তাদের। কারণ সাইপ্রাসে কাজ পেতে সময় লাগলেও যখনই কাজ পেয়ে যায় তখন আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সাইপ্রাসে খরচের তুলনায় ইনকাম অনেক বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা ভাইরাস এসে সবকিছু বদলে যাবে এটা কেউ ধারনাও করেনি। সাইপ্রাসে কষ্টের সময়গুলি কাটিয়ে ভাগ্য বদলাতে সুদিনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভাগ্য এখন উল্টো পথে হাঁটছে।
এখানে যারা আগে ভালো অবস্থানে ছিল তাদেরই কাজ নেই। বিশেষ করে সাইপ্রাসে বেশিরভাগই রেস্টুরেন্টের কাজ করে। বিগত আড়াইমাস ধরে রেস্টুরেন্টগুলো সব বন্ধ থাকায় সবাই বেকার হয়ে গেছে। আগামী মাসে রেস্টুরেন্টগুলো খোলার কথা থাকলেও আগের মতো আর ব্যবসা হবে না। ফলে রেস্টুরেন্টগুলো খুললেও যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের আর সহজে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যারা ডেলিভারি কাজ করতেন তাদের অবস্থাও ভালো না। অনেকেই কাজ করলেও কাজ হারিয়েছে অসংখ্য বাংলাদেশি। আর যারা বিভিন্ন গার্ডেন, এগ্রিকালচার এবং অন্যান্য পেশায় জড়িত তারাও বেকার হয়ে গেছে।
বিশেষ করে সাইপ্রাসে স্টুডেন্টরা সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। আর কয়দিন পর নতুন করে ভিসা লাগাতে হবে। তারা এখনো আগের বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারেনি, সেখানে নতুন করে টিউশন ফি দিয়ে আবার ভিসা লাগাবে এটা ভাবাও যায় না। কলেজগুলি থেকেও কোন প্রকারের সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। যার ফলে অনেকেই আর নতুন করে ভিসা লাগাতে পারবে না। তারা সামনে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটিতে পড়বে তা হল- করোনা ভাইরাসের কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে আইনকানুন শিথিল করলেও তার উল্টো পথে হেঁটেছে সাইপ্রাস। এখানে কোনো সুযোগ সুবিধা তো দেয়ইনি, বরং ধরে ধরে মামলা দিয়েছে। কাজে গিয়ে ইমিগ্রেশন থেকে চেক চালাচ্ছে। সাইপ্রাসে আগে কখনো কর্মস্থলে গিয়ে এইভাবে চেক করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। যার ফলে কাজ থাকলেও অনেকেই পুলিশের ভয়ে মালিক কাজ থেকে বিদায় করে দিয়েছে। তারা আদৌ আর কাজ পাবে কিনা এক অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
সাইপ্রাসের করোনা ভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও দেশের অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছে তা আর সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে না। ফলে এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হবে। থেমে গেছে আয়ের সকল উৎস, আগের মত আর সাইপ্রাস থেকে রেমিট্যান্স যাবে না বাংলাদেশে। আগামী দু'এক বছরের ভেতর যারা সাইপ্রাস আসবে তাদেরকেও পড়তে হবে এ সমস্যায়।
তাই বর্তমান এ পরিস্থিতিতে সাইপ্রাস আসাটা কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
লেখক: সাইপ্রাস প্রবাসী