ঢাকা, বুধবার, ৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৮ রমজান ১৪৪৬

রাজনীতি

মান্নান ভূঁইয়া ছিলেন চাল-চুলাহীন

মান্নান মারুফ, সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও সাজেদা সুইটি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৩
মান্নান ভূঁইয়া ছিলেন চাল-চুলাহীন

নরসিংদী থেকে: পরলোকে গেছেন মাত্র ৩ বছর ১ মাস আগে। আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার শিবপুরের বাড়িটি এরই মধ্যে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে।

বাড়িটির প্রতিটি কক্ষ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায়নি তার কোন ছবি।
 
জন্মস্থান মাছিমপুরে গেলে আরও চমকে যেতে হয়। সেখানে তার কোন ঘর নেই। গ্রামে এলে চাচার বাড়িতেই বসতেন মান্নান ভুইয়া।
 
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মান্নান ভূঁইয়ার ৬ মাস বয়সে তার বাবা মারা যান। আর মাকে হারান ১১বছর বয়সে। চাচা আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া তাকে বড় করে তোলেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে গ্রামে এলে চাচার বাড়িতেই বসতেন। তবে কোনদিনেই রাত্রীযাপন করেননি নিজ গ্রাম নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুরে।
 
পিতার আবাসস্থল অনেক আগেই অন্যদের দখলে চলে গেছে। কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে বসতভিটা থেকে ১শ’ গজ দূরে একটি জমিতে বাড়ি করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তা আর এগোয়নি।
 
মান্নান ভূঁইয়া যে জমিটিতে বাড়ি করবেন বলে মনস্থির করেছিলেন, সেই জমিটিতে এখন লেবুর বাগান করা হয়েছে।
 
গ্রামবাসীরা জানান, মান্নান ভূঁইয়া সম্পদের বিষয়ে ছিলেন উদাসীন। তার দাদার পৈত্রিক ভিটা অন্যরা ভোগ দখল করলেও তা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। এমনকি শিবপুর উপজেলা সদরে সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ সংলগ্ন তিন কক্ষ বিশিষ্ট বাড়িটি করেছেন তাও নেতাকর্মীদের পিড়াপিড়ির কারণে।
 
ওই জমিটি তার এক সমর্থক জোর করেই লিখে দেন। পরে নব্বইয়ের দশকে সেখানে বাড়ি করেন মান্নান ভূঁইয়া। নরসিংদী আসলে সেখানেই অবস্থান করতেন তিনি।
 
মান্নান ভুইয়ার চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, মান্নান ভূঁইয়ার বাবা আব্দুল হাই ভূঁইয়া মারা গেলে অন্য ভাই ব্যবহার করেন ঘরটি। সঙ্গত কারণে পৈত্রিক ভিটায় মান্নান ভূঁইয়ার কোন ঘর নেই। জীবিত থাকতে মান্নান ভূঁইয়া এ নিয়ে কোন কথা বলেননি।
 
মান্নান ভূঁইয়া বেঁচে থাকতে শিবপুরের বাড়িটি ছিল এলাকাবাসীর ভরসাস্থল। বিপদে আপদে তারা এই বাড়িটিতেই আসতেন। বাড়িটির মূল ফটক পার হলেই বিশাল আকারের ২টি লিচু গাছ রয়েছে। তার নিচেই শায়িত আছেন সবার প্রিয় মান্নান ভূঁইয়া।
 
মান্নান ভূঁইয়ার স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়িটিতে মানুষের চলা ফেরা কমে যাওয়ায় উঠোনে শেওলা পড়েছে। দেখলে মনে হবে যেন কয়েক বছর হবে কোন মানুষের পা পড়েনি এ দিকে।
 
প্রাচীর ঘেরা ছোট্ট বাসাটিতে কক্ষ রয়েছে মাত্র ৪টি। প্রথমে ঢুকতেই পড়বে ড্রয়িং রুম। এরপর মান্নান ভূঁইয়ার বেডরুম। বেডরুমেরও বেহাল অবস্থা। স্টিলের আলমিরাটি মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর বেডের উপর ময়লার স্তূপ।
 
তার বেডরুম পার হলেই আরও একটি বেডরুম। আর সোজাসুজি উত্তরে ডাইনিং এবং কিচেন। উঠোনে পানি খাওয়ার জন্য নলকূপ থাকলেও তাতে যে হাত পড়ে না তা সহজেই অনুমান করা যায়। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে বাড়িটির প্রতিটি কক্ষে ঘুরলেও মান্নান ভূঁইয়ার কোন ছবি চোখে পড়েনি।
 
বাড়ির সীমানা প্রাচীরের মধ্যে মান্নান ভূঁইয়ার সমাধিও যেন অনেকটাই অবহেলিত। ৩ বছর পার হলেও এখন পুরো পাকাকরণের কাজ শেষ হয়নি। একপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী।
 
কেয়ারটেরা ধনুয়া কলেজপাড়া জামে মসজিদের ইমাম তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মৃত্যুবার্ষিকী ছাড়া এখানে তেমন লোকজন আসে না। আমি একাই থাকি। ’
 
তিনি জানান, মান্নান ভুইয়ার ছেলেরাও তেমন একটা গ্রামে আসেন না। ৩টি মৃত্যু বার্ষিকীতে দোয়া ও আলোচনা সভা করা হয়েছে তাতে এসেছিলেন ছোট ছেলে ভুইয়া নন্দিত নাহিয়ান স্বজন।
 
সর্বশেষ ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী ২৮ জুলাইয়ে এসেছিলেন তার স্ত্রী ও ছোট ছেলে। বড় ছেলে থাকেন কানাডা। বাবার মৃত্যূর পর ৩ বার দেশে আসলেও কবরে জিয়ারত করতে এসেছিলেন ২ বার। তবে তার স্ত্রী আসেন ২/৩ মাস পর পর।
 
মান্নান ভূঁইয়া ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ মাছিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। আর ২৮ জুলাই ২০১০ সালে পরলোকগমণ করেন। ১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতখড়ি তার। ১৯৮০ সালে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। দু’ দফায় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মান্নান ভূঁইয়া। সর্বশেষ এক এগারো সরকারের সময়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৩
এমএম/ইএস/এসকেএস/এমজেএফ/জেসিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।