খালেদা জিয়ার তিনজন চিকিৎসকও এসময় উপস্থিত ছিলেন। তারা একে একে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রথমে নিউরো মেডিসিনের প্রফেসর ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার যে সমস্যা সেটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় 'সার্ভাইকাল স্পন্ডিলাইটিস' বলে। তার ঘাড়ের হাড়গুলোর ক্ষয় হয়ে সেখানে নার্ভ (স্নায়ু) চাপা পড়ে গেছে। ঘাড় থেকে যে নার্ভগুলো হাতের দিকে যায় সেগুলো চাপা পড়ে যাওয়ায় ডান হাতে তিনি (খালেদা জিয়া) যতটুকু শক্তি পাচ্ছেন, বাঁ হাতে সেটা পাচ্ছেন না। এর ফলে বাম হাতের গ্রিপ দিয়ে কিছু ধরতে গেলে সেটা পড়ে যাচ্ছে। তার বাঁ হাতে সারাক্ষণই ব্যথা থাকে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এতো ব্যথা নিয়ে আপনি কী করে থাকেন। তিনি (খালেদা জিয়া) বললেন, এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। মানসিক জোর উনার সাংঘাতিক বেশি।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া ওনার (খালেদা জিয়া) আর্থ্রাইটিস আগে থেকেই আছে। আঙ্গুলগুলো ফোলা ফোলা। কোমরের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে সেখানে স্পাইনাল কর্ড চাপা পড়ে গেছে। অনেকটা সরু হয়ে গেছে। তিনি (খালেদা জিয়া) এখান থেকে ওখানে হেঁটে যেতে পারেন না। হাঁটতে গেলে পা চেপে আসে। আগে হাঁটতে পারতেন এখন নীচেও নামতে পারেন না।
ওয়াহিদুর রহমান বলেন, এসব কারণে যা হতে পারে তা হলো শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। প্রস্রাব-পায়খানার কন্ট্রোল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে। এগুলোর আশঙ্কা আছে। তাকে এখন চিকিৎসা দেয়া দরকার। যেখানে উনি আছেন সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে এক ঘণ্টার মধ্যে আর আসে না। ঝড়বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি পড়ছে, অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে এই পরিবেশে তার সমস্যা আরও বাড়বে। তার যে চিকিৎসা দরকার সেটা ওখানে সম্ভবই না। ওনাকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা লিখে দিয়ে এসেছিলাম। ওনার দুই হাঁটুতে ইমপ্লান্টেশন আছে। মেটালিক বস্তু বসানো আছে। নার্ভগুলোর জন্য পরীক্ষা করানো দরকার। ডাক্তারি ভাষায় যেটাকে বলা হয়, নার্ভকন্ডাক্ট স্টাডি, সেটাও করা দরকার। যে অবস্থায় উনি আছেন সেভাবে থাকলে তার অবস্থা আস্তে আস্তে আরো খারাপ হয়ে যাবে।
অর্থপেডিক্সের প্রফেসর ডা. সিরাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি বহুদিন ধরে ম্যাডামের (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসা করি। ওনার হাত-পায়ের আঙুলগুলো সব বাঁকা হয়ে গেছে। অস্টিওপরোসিস (হাড়ের ক্ষয়রোগ) হয়ে গেছে। তার হাঁটুর যে অবস্থা তাতে তিনি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। দু’জনের সাহায্য নিয়ে হাঁটাতে হয়। দুই হাঁটুরই অবস্থা করুণ। তারা যেসব চিকিৎক দেখিয়েছেন তাদের দিয়ে হবে না। ওনার ওয়েল রেপুটেড ফিজিওথেরাপিস্ট দরকার। সম্পূর্ণ ওয়েল ভেন্টিলেটেড রুম দরকার। ওই স্যাঁতস্যাঁতে রুমে ওনাকে রাখা হলে উনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন, হয়তো তার জীবনীশক্তিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চক্ষুবিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) ২০১৫ সাল থেকে চোখের চিকিৎসা করি। আমার সঙ্গে ছিলেন প্রফেসর সাহাবউদ্দিন ও প্রফেসর মারুফা। ২০১৫ সালে লন্ডনে তার দুই চোখের অপরাশেন করেন।
তিনি বলেন, আজকে দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে যা বললেন, তাতে বলা যায় যে অন্য অসুখের জন্য চোখেও অসুখ হয়। চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া অসম্ভব খারাপ একটি অসুখ। আর্টিফিসিয়াল টিয়ার উনি সব সময় ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, আমরা দু’জন চিকিৎসক গত ২০ এপ্রিল জেলখানায় যাই। আমাদের ২ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি নেয়া সম্ভব নিয়ে গিয়েছিলাম। দুই ঘণ্টা পরে ওখান থেকে বলা হলো ম্যাডাম হেঁটে নীচে আসতে পারেন নাই, তাই আজকে দেখা করা সম্ভব হবে না। আমরা তো একজন রোগীর চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। এখন ওনার যে অবস্থা, এই অবস্থায় যদি চিকিৎসা না পান, একবার যদি চোখের কর্নিয়া ড্রাই হয়ে যায়, তাহলে এই কর্নিয়া কোনো অবস্থায়ই ভালো করা যাবে না। যদি হেপাটিস হয়ে যায় তাহলে যে কোনো সময়ে ওনার অন্ধত্ব হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৮
এমএইচ/এসএইচ/জেএম