শনিবার (১৩ জুন) সকালে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি গঠিত জাতীয় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতায় করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। সরকারের চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীন আচরণে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাবে দেশে মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত প্রায় লাখের কাছে। বেসরকারি বা অন্য সূত্রে আক্রান্ত ও মৃত্যর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। ’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ২ মে থেকে এখন পর্যন্ত ৫৯৯ জন রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলেন ১৩৯ জন। বাকিদের করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। পরীক্ষার বাইরে উপসর্গে মৃত ও আক্রান্তদের পরিসংখ্যান সরকারি হিসাবে আসছে না। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না বললেই চলে। শুধু ভিআইপি ও সরকার দলীয় লোকেরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশে একটি ভেন্টিলেটর, আইসিউ বেড ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য হাহাকার চলছে। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই রোগী মারা যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এ বরাদ্দের টাকা দিয়ে যদি স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি করা হতো তাহলে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়তো না। সত্যিকার অর্থে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সমন্বিত কোনো কাজ করেনি সরকার বরং সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তার মাধ্যমে তারা এ সংকট আড়াল করার চেষ্টা করছে। ’
বিএনপির পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কতগুলো সুপারিশ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পর্যাপ্ত মানসম্মত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারিত করতে হবে। অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে রেশন কার্ডের মাধ্যমে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থনীতির চালিকা শক্তি গার্মেন্টস কর্মী ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের আর্থিক সুবিধা ও সুচিকিৎসা দিতে হবে। সরকারি ত্রাণ ও অর্থ বিতরণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে তা সঠিকভাবে পালন হবে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এতে উপকৃত হবে। এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই, সরকারি দলের কিছু নেতা ও বিভিন্ন সংস্থা বিএনপির জনপ্রতিনিধি লুটপাটে জড়িত বলে মিথ্যা প্রচারণা চালানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ এসব নির্বাচনে বিএনপি কাউকে মনোনয়নই দেয়নি। আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা উপস্থাপন করতে হবে। তথ্য লুকিয়ে মিথ্যে সাফল্য দেখানোর প্রবণতা জনগণের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২০
এমএইচ/এফএম