চলতি বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাবটা অর্জন করেছে জুনিয়র টাইগাররা। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছে বাংলার যুবারা।
দেশে ফিরে বিরোচিত সংবর্ধনা পেয়েছে টাইগাররা। এই সবকিছুই হয়েছে আকবরের জন্য। বিশ্বকাপ চলাকালীন মাতৃতুল্য বোনকে হারিয়েছেন। তবে বোনের মৃত্যর খবর পেয়েও দেশে ফিরে আসেনি আকবর। লড়ে গেছেন দেশের জন্য। তাই তো অনেক বেশি সম্মানের জায়গায় থাকবেন আকবর।
করোনায় দেশের ক্রিকেট আপাতত স্থগিত। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে। এক ম্যাচ খেলেছেন। দলকে জেতাতে না পারলেও খেলেছেন কার্যকরী ইনিংস।
করোনার কারণে বর্তমানে নিজ শহর রংপুরে রয়েছেন আকবর আলী। মুঠোফোনে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন বিশ্বকাপ জয়ে অনেক তথ্যসহ নিজের বহু কথা। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
বাংলানিউজ: বিশ্বকাপজয়ী অধিনাক আকবর এই অনুভূতিটা কেমন লাগে?
আকবর: হ্যাঁ, এটা এখনো ভালো লাগে, অবশ্য যখনই হাইলাইটস দেখি ভালো লাগে যে, ভালো কিছু একটা করেছি।
বাংলানিউজ: বিশ্বকাপ খেলার মূল টার্গেট কি ছিল, বিশ্বকাপ জেতা নাকি ভালো ক্রিকেট খেলা?
আকবর: আল্টিমেট গোল তো ছিলই আমাদের ওয়ার্ল্ড কাপ জিতবো। ওয়ার্ল্ড কাপের আগেই আমরা সবাই বলেছিলাম যে এবার আমার ফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে যাচ্ছি। আর যখন ওখানে গেছি তখন আমরা আর অতদূরে চিন্তা করিনি। তখন ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলার চেষ্টা করেছি।
বাংলানিউজ: বিশ্বকাপ জয়ের আত্মাবিশ্বাসটা কবে থেকে তৈরি হয়?
আকবর: আমার মনে হয় যে ২০১৯ সালটা আমাদের ভালো গিয়েছিল। যেখানেই ক্রিকেট খেলেছি, আল্লাহর রহমতে ভালো ক্রিকেট খেলেছি। বিশ্বাসটা আসলে ওখান থেকেই তৈরি হয়েছে যে আমরা যেকোনো টিমকে হারাতে পারি। আর ওয়ার্ল্ড কাপে যাওয়ার পর শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জিম্বাবুয়ের সাথে আমরা খুব ভালো একটা শুরু পেয়েছিলাম। খারাপ হয়নি আসলে, পাকিস্তানের বিপক্ষে শুধু আমরা খারাপ ব্যাটিং করেছিলাম বাকি পুরোটা কিন্তু আমরা খুব ভালো খেলেছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেয়েছি।
বাংলানিউজ: গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাতে ব্যাটিং খারাপ হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা পরিত্যাক্ত হওয়ায় কি আপনাদের জন্য সতর্কবার্তা ছিল?
আকবর: পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা ব্যাটিং খারাপ হওয়ার পর আমার মনে হয় যে সবাই আরও ভেতরে ভেতরে ডিটারমাইন্ড ছিলাম যে এভাবে খেললে হবে না, আরো অনেক ইম্প্রুভ করতে হবে। ইম্প্রুভ বলতে আরো অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। আমার মনে হয় পাকিস্তান গেমটা ভালো কাজ করছে।
বাংলানিউজ: সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে সহজেই হারাবেন এটা কি চিন্তায় ছিল কখনো?
আকবর: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১১ রানের টার্গেট পেয়েছিলাম। আমাদের ওপেনাররা তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গিয়েছিল। ওখান থেকে হৃদয় যে পার্টনারশিপ করেছিল ওই পার্টনারশিপই খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে। জয়ের সেঞ্চুরিটা অনেক ভালো ছিল। হয়তোবা ওখানে আরেকটা উইকেট পড়লে খেলাটা অন্যরকম হতে পারত।
বাংলানিউজ: ফাইনালে ভারতকে হারানোর অনুভূতিটা কেমন ছিল, কেননা ভারতের কাছে আমরা বারবার হেরে যাই?
আকবর: ভারতকে আমরা আগেও হারিয়েছি, তাদের হারিয়েছি বলে বাড়তি উচ্ছ্বাস এরকম আমার কাছে মনে হয়নি। আমি মনে করি ভারতকে হারিয়েছি বলে নয়, ওয়ার্ল্ড কাপ জিতেছি বলেই ফিলিংসটা অনেক ভালো ছিল সেলিব্রেশনটা ওরকম ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে ইন্ডিয়া ছিল বলে ওরকম হয়েছে। যে কোনো টিমকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেই আমরা ওরকম করতাম বা ওরকম সেলিব্রেশন করতাম।
বাংলানিউজ: ফাইনালের স্লেজিংটা কিভাবে সামলিয়েছেন?
আকবর: আমাদের টিম মিটিংয়ে এটা আগে থেকে কথা হয়েছে যে এর আগেও যখন তাদের সাথে যখনই খেলেছি তারা সব সময় এরকম করে। তো এটার জন্য মেন্টাল প্রিপারেশন আমাদের আগে থেকেই ছিল। তারা এভাবেই খেলবে আমরাও সেভাবে প্রিপারেশন নিয়ে রেখেছিলাম যে মাঠে তারা এটা করবেই। ওটার প্রতি ওভার রিয়েক্ট না করা, ওটাকে পাত্তা না দিয়েই ব্যাট আর বলে ফোকাস করতে হবে তারা এটা করবেই।
বাংলানিউজ: বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের ফাইনালের চাপটা কিভাবে জয় করলে? কখনো মনে হয়ছিল ম্যাচটা হেরে যাবেন?
আকবর: আমরা সবগুলো গেম নর্মাল গেম হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আর চাপ থাকবেই কিন্তু অন্যান্য গেমে যখনই আপনি চাপে থাকেন আপনি যে বেসিক গুলো ফলো করেন, বল বাই বল চিন্তা করা, বেশি দূরে চিন্তা না করা, তো ওভাবে চিন্তা করছিলাম যে যেভাবেই হোক ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। কারণ আমাদের বলের কোনো চাপ ছিল না। বল প্রচুর ছিল, ওভার টাচিং করাটাই ইম্পরট্যান্ট ছিল। ওখানে তো ওটাই করার চেষ্টা করছিলাম। আর ইমন-রাকিব ওরা খুব ভালো সাপোর্ট করেছে বলেই আসলে খুব সহজ হয়ে গিয়েছিল ওই জায়গায়। আর চাপতো ছিলই কিন্তু আপনাকে এটা মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে।
বাংলানিউজ: এমন একটা ম্যাচজয়ী ইনিংস ক্যারিয়ারে কতটুকু আত্মবিশ্বাস জোগাবে?
আকবর: এটা অবশ্যই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তবে পরিস্থিতি যতই খারাপই হোক না কেন বিশ্বাসটা যেন থাকে যে কোনো ম্যাচে জিততে পারবো।
বাংলানিউজ: সিনিয়র ক্রিকেটাররা এখন কতটুকু সহায়তা করছে?
আকবর: সিনিয়রদের সাথে দেখা হয়েছে। সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। যদিও টেকনিক নিয়ে তারা কোন হেল্প করেনি। তারা মেন্টালি অনেক হেল্প করেছে যেমন আমি এবার গাজীতে আছি সেখানে সৌরভ ভাই আছে, রিয়াদ ভাই আছে, আরিফ ভাই আছে। ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে তো কোচ কথা বলছেন, বাট তারা মেন্টালি যতটুকু হেল্প করা দরকার তা করছে।
বাংলানিউজ: আপনি তো উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। মুশফিক-লিটনদের জন্য তো বাংলাদেশ জাতীয় দলে এখন জায়গা পেতে হলে আপনার জন্য অনেক বেশি কঠিন। বিষয়টা কিভাবে মূল্যয়ন করবেন?
আকবর: আসলে ফাইট করতেই হবে। সিনিয়র লেভেলে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সাথে খেলতে হবে। আর ন্যাশনাল টিমের কথা এখনই মাথায় রেখে খেলতে চাই না। যেখানে খেলি না কেন প্রিমিয়ার লিগ বা ন্যাশনাল লিগ, যেখানে খেলি খেলাটা উপভোগ করতে চাই। অবশ্যই ভালো খেলতে চাই, কে কি করছে এটা যদি চিন্তা করি তাহলে আমার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আমার কাজটা আমাকেই করতে হবে। আমাকে ভালো খেলতে হবে পরেরটা পরে দেখা যাবে। বেশি দূরে ভাবতে চাই না।
বাংলানিউজ: চ্যালেঞ্জ নিতে কতটুকু প্রস্তুত?
আকবর: আমরা যতদিন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছি আমাদের স্কিল মোটামুটি কাছাকাছি থাকে। মেন্টালি আমরা খুব কাছাকাছি থাকি, কিন্তু আপনি যখন সিনিয়র লেভেলে আসবেন তখন... মানে যখন সিনিয়রদের সাথে খেলবেন তাদের অভিজ্ঞতার বিরুদ্ধেই আপনাকে খেলতে হবে। এই জায়গাটা আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। আরো ফোকাস থাকতে হবে সবসময় যেহেতু আপনাকে অভিজ্ঞতার বিপক্ষে বিট করে খেলতে হবে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে এই জিনিসটা বেশি চ্যালেঞ্জিং ওটার জন্য আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
বাংলানিউজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য।
আকবর: আপনাকেও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২০
আরএআর/এমএমএস