ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

উপমহাদেশের প্রথম চা বাগানে

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
উপমহাদেশের প্রথম চা বাগানে  ছবি: জিএম মুজিবুর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে: ১৬৫০ সালে চীনে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। দেশটির বুদ্ধিজীবীদের প্রতিদিনকার জীবনের ৭টি কাজের একটি ছিল চা পান।

তার প্রায় ২০০ বছর পরে ১৮৫৪ সালে পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের সিলেটেই প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়।   চায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ আর বাংলাদেশিরা। সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান থেকেই উপমহাদেশে চা চাষের গোড়াপত্তন। এরপর দেড় শতাব্দীর মালনীছড়া বহু ইংরেজ, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি ব্যবস্থাপকের হাত ঘুরে ১৯৮৮ সাল থেকে এখনও ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে।
 
সিলেট শহরের খুব কাছেই এই চা বাগানটি সবুজ ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর। প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিস্বত্ব সীমানায় উঁচু-নিচু টিলার পর টিলায় ভরা চা বাগানটি। রয়েছে এক হাজার দুইশ একর জমি, রাবার আবাদের জন্য সাতশ একর জমি এবং কারখানা, আবাসন, বৃক্ষ, বনজঙ্গল জুড়ে বাকি জমিটুকু। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশে এসে যারা খুব অল্প সময়ে খুব সুন্দর কোনো সবুজের গালিচায় হারিয়ে যেতে চান তাদের জন্য অনন্য মালনীছড়া চা বাগান।
 
মালনীছাড়া ছাড়াও এখানে রয়েছে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার টি এস্টেট এবং পশ্চিম দিকে ভেতরে তারাপুর চা বাগান। পূর্বদিকে কালাগুল চা বাগানের আরও পূর্বে চিকনাগুল চা বাগান। বাগানে বাগানে পুরো একটি চা অঞ্চল সিলেটে। শ্রীমঙ্গলকে চায়ের দেশ বলা হলেও সিলেটের এই চা বাগান থেকেই চা চাষের গোড়াপত্তন। যা এখন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ।
   

সেই ইতিহাস ঐহিত্যের চা বাগানের বুক ভেদ করে চলে গেছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক। আকাশপথে যারা সিলেটে আসেন তাদের প্রথমেই স্বাগত জানায় এই চা-বাগান। বাগানটির অদ্ভুত সুন্দরের মায়ায় পড়েছিলেন অনেক বিদেশি। গাড়ি থামিয়ে তারা দাঁড়িয়েছেন বাগানের পাশে।
 
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস প্লেন থেকে নেমে বাগানের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে বলেছিলেন, পৃথিবী এতো সুন্দর যে মালনীছড়া বাগান না দেখলে তা বোঝা যাবে না।
 
শুধু হ্যারি কে টমাস নয়, সিলেটের চা বাগানের সবুজ মায়ায় প্রতিদিন জড়ো হন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক। কিন্তু এখনও বাগানে পর্যটকদের জন্য ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা নেই। নেই রেস্টুরেন্ট বা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা।

বাগানে হাঁটলেই চোখে পড়ছে কমলা, কাঁঠাল ও সুপারি বাগান। এছাড়া ট্যাং ফল, আগর, রাবার চন্দনসহ অনেক ওষুধি-শোভাবর্ধক বৃক্ষ রয়েছে বাগানটিতে। বাগানের যেকোনো একটি পথ ধরে ঢুকে পড়লে দেখা যায় উঁচু-নিচু টিলায় ভেতর দিয়ে চলে গেছে মাটির রাস্তা। হেঁটে ভেতরে গেলে একেকটি রাস্তা ধরে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটা যায়।  
 
মালনীছড়া চা বাগান শুধু সবুজের গালিচা আর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির বাগান নয় এটি ইতিহাসেরও অংশ। পূর্বদিকে ঢুকে পড়লে দেখা যাবে হারুং হুড়ুং গুহা। কথিত আছে হজরত শাহজালালের (র.) কাছে পরাজিত হয়ে রাজা গৌর গোবিন্দ এ পাহাড়ের মধ্যে সৃষ্ট দুটো গুহাপথ দিয়ে পলায়ন করেন। আজও গুহা দুটি কালের সাক্ষী। তবে গুহা দর্শন করতে হলে যেতে হবে বাগানের অনেক ভেতরে। মালনীছড়া প্রধান বাংলোর পাশের রাস্তা দিয়ে অন্তত তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে গেলেই গুহার দেখা পাওয়া যায়।
 
এছাড়া বাগানটির বিশেষত্ব মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। ১৯৭১ সালে চা বাগানের দায়িত্বে থাকা শওকত শাহনেয়াজকে পাকিস্তানি সেনারা অফিস থেকে ধরে নিয়ে বাগানে হত্যা করে। তার স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে বাগানে।
 
যেভাবে যাবেন:
সিলেট থেকে বিমানবন্দর সড়ক ধরে মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পরই শুরু চা বাগান। মালনীছড়ায় বেড়াতে এলে সিলেট শহরের যেকোনো হোটেল-মোটেলে থাকা যায়। তবে মালনীছাড়ার সবচেয়ে কাছে বিমানবন্দর সড়কের বড়শালায় রয়েছে পর্যটন করপোরশনের মোটেল। এছাড়া দরগাগেট ও আম্বরখানা এলাকায় রয়েছে অসংখ্যা হোটেল মোটেল।


**ঢাকা-সিলেট: চারলেনের অপেক্ষায় সিলেটবাসী ও পর্যটক
**দুই কারণে সাতছড়িতে ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী
** ট্রেইলে নয় ওয়াচ টাওয়ারে সাতছড়ি দর্শন
** বাসে বিমানের ছোঁয়া!
**এসি বাস নেই সিলেট রুটে!

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
এসএ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।