ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

টাইটানিক ও মেঘ-পাহাড়ের মিরিঞ্জা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
টাইটানিক ও মেঘ-পাহাড়ের মিরিঞ্জা ছবি: সোহেল সারওয়ার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লামার মিরিঞ্জা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে: পাহাড়ি পথ ধরে আসা বাস যেখানে নামিয়ে দিলো, সেখান থেকে মিরিঞ্জা পর্যটন কেন্দ্রের ফটক মিনিটখানেকের দূরত্ব।

মাথার ওপর আগুন ঢালছে সূর্য।

দেরি না করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় হাজার ফুট উঁচু মিরিঞ্জার ফটক গলে ভেতরে পা দিতেই কানে সুর তুললো কাছে কোথাও বয়ে চলা ঝরনার শব্দ।  

নাকে ঠেকলো পাহাড়ি বুনো ফুলের মাতোয়ারা ঘ্রাণ। ওপরে সুনীল আকাশ, ক্ষণে-ক্ষণে সে নীল ঢেকে দিচ্ছে উড়ন্ত মেঘের দল।

পাহাড়-মেঘের মিতালিঘেরা মিরিঞ্জার রূপ-গন্ধ মুহূর্তে মনকে উদ্বেলিত করে তুললো।

ভেতরে প্রবেশ করতেই বামে সিমেন্টের তৈরি ব্যাঙের ছাতার ভাস্কর্য। চারপাশে সুনশান নীরবতা।

ফটকের আগে সাইনবোর্ড থেকে জানা গেলো, উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও জেলা প্রশানের উদ্যোগে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত মিরিঞ্জাকে নতুন রূপে গড়তে চলছে সংস্কারকাজ।

ব্যাঙের ছাতার ভাস্কর্য পেরিয়ে হাতের বামে টিলার ওপর তৈরি ভাস্কর্য টাইটানিক। ৬৫টি সিঁড়ি ভেঙে টাইটানিকে উঠে দেখা গেলো, এটা অনেকটা বিশ্বখ্যাত টাইটানিক জাহাজের কাঠামোর আদলে করা ভিউ পয়েন্ট। এর  খ্যাতি এতোই যে, টিলার নামই ‘টাইটানিক পাহাড়’ হয়ে গেছে।  

টাইটানিকের কোনায় দাঁড়িয়ে এক নজরে দেখে নেওয়া যায় পুরো জনপদ; সেইসঙ্গে দিগন্ত রেখায় ডুবন্ত সূর্যের রক্তআভা ও সূর্যোদয়ের অপরূপ দৃশ্য দেখা সম্ভব।

টাইটানিক থেকে নেমেই সংযোগ সেতুসহ দুই স্তরের গোলঘর মালঞ্চ। নির্জনে বসে জিরিয়ে নিতে এ স্থানটি অনন্য। এগুলো বর্তমানে নতুন নকশায় সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানালেন সেখানে কাজের দায়িত্বে থাকা রাজমিস্ত্রি মুজিবুর রহমান।

তিনি জানান, তারা গত কয়েকদিন ধরে এখানে কাজ করছেন। মাসখানেকের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবেন। এরপর এখানে হাতি, ঘোড়া, বাঘসহ কিছু ভাস্কর্য গড়া হবে।

মিরিঞ্জার আরো কিছুটা ভেতরে এক টিলায় গোলাকার বড় আকৃতির রেস্ট হাউস কাম বিশ্রাম কেন্দ্র বনরত্না। এ টিলাতে উঠতেও মাড়াতে হবে ৬৫টি সিঁড়ি।  

বনরত্না বরাবর মিরিঞ্জার একেবারে শেষ মাথায় আরেক গোলাকার রেস্ট হাউস চন্দ্রিমা। এ গোলঘরে বসে চাঁদনী রাত উপভোগ করা যাবে। তবে এর কয়েক হাত পরই গভীর খাদ, যেখানে রয়েছে সরু লম্বা খাল।

এদিকে, বনরত্না থেকে বামে পাহাড়ের শেষ মাথায় গোলাকার লালরঙা আরেকটি রেস্ট হাউস। এখানে বসেও দেখা নেওয়া যায় এক নজরে পুরো এলাকা।  

সংস্কার কাজ চলায় স্থানীয় কয়েক যুবক ও এক প্রেমিক জুটি ছাড়া কাউকে দেখা গেলো না। তবে ভেতরে দেখা গেলো কয়েকটি গরুকে এলোমেলোভাবে চরে বেড়াতে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।

মিরিঞ্জায় প্রবেশের জন্য জনপ্রতি টিকিট মূল্য ২০ টাকা। তবে টিকিট নিতে হয় মিরিঞ্জার মূল ফটক সংলগ্ন আলীকদম-লামা সড়কের পাশের একটি দোকান থেকে।
এখানে খাবার দোকানও এটিই।  

ওই দোকানে পাওয়া গেলো টিকিট বিক্রেতা কিশোর ওসমানকে। সে জানায়, দোকানটি তাদের। আর টিকিট বিক্রির চলতি বছরের ডাক পেয়েছে তার পরিবার। ফলে কেউ বেড়াতে এলে সে টিকিট দেয়।
 
মিরিঞ্জা থেকে দুপুরে বের হতে দেখা গেলো স্থানীয় দুই যুবককে। শাহিন নামে একজন জানালেন, প্রায়ই তারা এখানে আসেন।
 
তবে জেলা প্রশাসনের কাজ শেষে এটিকে আরো আকর্ষণীয় করে পুরোপুরি চালু করা গেলে, মিরিঞ্জা হয়ে উঠবে নীলগিরি, নীলাচলের মতো অপূর্বসুন্দর পর্যটন কেন্দ্র।

এছাড়া মিরিঞ্জায় যাতায়াতও তুলনামূলক সহজ। এর মূল সড়ক পর্যন্ত পাকা রাস্তা থাকায় গাড়িতেই আসা যায় এখানে। ফলে অন্যান্য কিছু পাহাড়ের মতো পায়ে হেঁটে ওঠার দুর্ভোগ নেই মিরিঞ্জায়।
বাংলাদেশসময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এসআর/জেডএম
আরও পড়ুন>>
** বিকল্প পেলে তামাক চাষ ছাড়বেন আলীকদমের চাষিরা
** একজন শামসুল ও কৃষিতে পরিবর্তনের শুরু ....
** শিশিরভেজা সকালে ম্যারাইংতং পাহাড়ের ম্রো পাড়ায়
** মাতামুহুরী নদীর 'বক দ্বীপ'
** প্রবারণায় বান্দরবান রাজার মাঠে উৎসবের সাজ
** নিরবধি বয়ে চলা 'শৈল প্রপাত'
** দ্য ওয়াটার ল্যান্ড অব রাঙামাটি
** পানির রাজ্যে পাহাড়ের বুদ্ধ...
** প্রশান্তি বিলাতে কাপ্তাইয়ের ‘রিভার ভিউ পিকনিক স্পট’
** দেশের যে শহরে রিকশা নেই!
** খাগড়াছড়ির প্রবারণা উৎসবে…
** 'জিরাফ গলার' ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণও কম নয়
** রেল স্টেশনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি
** রাবার ড্যামে চেঙ্গী নদীপাড়ের কৃষকদের সুদিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।