বাগেরহাট থেকে: ‘নদীর বাঁকে বসতো যে হাট, সেটাই বাগেরহাট’- একথা প্রচলিত আছে ঐতিহ্যবাহী শহর বাগেরহাট নিয়ে। নদটির নাম ভৈরব।
সকালটা তাই ভালোই জমে ওঠে ভৈরবের পাড়। প্রথমে সামুদ্রিক মাছের হাঁকডাক, তারপর বাজার। দক্ষিণাঞ্চলের ঘেরবিধৌত এ জেলায় নারিকেল, সুপারি, পানের পাশাপাশি খাদ্য হিসেবে মাছের রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। এর প্রমাণ মিললো বাজারে গিয়ে।
সমুদ্রের মাছ তখন বিকিকিনি শেষের দিকে। তবে জমে উঠতে শুরু করেছে মূল বাজার। হরেক মাছের মধ্যে সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাটের বিখ্যাত মাছ পারসের দেখা। তবে জ্যান্ত। রীতিমতো লাফালাফি করছে। নরম এ মাছটিকে জ্যান্ত দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার বটে! কারণ ঘের থেকে ধরে বাজারে আনতে আনতে মারা যায় এরা। দাম জিজ্ঞেস করতেই বিক্রেতা বললেন, কেজি ৫শ টাকা। সাইজে বড় আর জ্যান্ত হওয়ায় দাম একটু বাড়তি।
এ বাজারে বরফের মাছ খুবই কম। কিছু সামুদ্রিক মাছই মূলত রাখা হয়েছে বরফে। জেলার চিতলমারী, ফকিরহাট, সদর, কচড়া, মোড়েলগঞ্জসহ সব জায়গায় অসংখ্য ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে মূলত, চিংড়ি, ট্যাংরা, পারসে, ভাঙান, ভেটকি, গুলি প্রভৃতি দারুণ স্বাদের মাছ হয়। দেশের অন্যসব এলাকায় এসব মাছ সহজলভ্য নয়।
মাছ পছন্দকারীদের কাছে বাজারটি সত্যি স্বর্গ। দাম একটু বেশি হলেও সব রকম মাছের সমাহার এখানে। ট্যাংরা মাছগুলোও অধিকাংম জ্যান্ত ছটফটে। আকারেও বেশ বড়। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৫০০ টাকা। কোরাল প্রজাতির বড় আকারের ভেটকি সাড়ে তিন থেকে ৫শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বিক্রি হচ্ছে এখানে।
চিংড়ি বাদে এসব মাছকে এ অঞ্চলে বলা হয় সাদা মাছ। পর্যটক আকর্ষণের এ জেলার প্রায় সব হোটেলে মেলে এসব মাছ। দামেও কম। বাইরে থেকে এসে তাই পর্যটকরাও খোঁজেন এ এলাকার মাছ। তবে যারা মাছ শুধু খাওয়া নয়, কিনতে কিংবা দেখতে পছন্দ করেন তারা একবার ঢুঁ মারতে পারেন শহরের এ বাজারে।
বাগদার দেখা পাওয়া গেল না, তবে গলদা রয়েছে বেশ। দামও ৫-৭শ টাকার মধ্যে। ভালো স্বাদের জন্য এমনিতেই দেশজোড়া খ্যাতি রয়েছে ঘেরের মাছের। এর মধ্যে যদি আবার জ্যান্ত হয় তবে তো কথাই নেই। তাই জ্যান্ত মাছের প্রতিই ক্রেতা আগ্রহ বেশি দেখা গেলো।
ঘের ছাড়াও বিলের জ্যান্ত দেশি কই, শিং, মাগুর, শোল, টাকি, গচি মাছও রয়েছে বেশ। মেলানো মুশকিল দাঁতনে, পায়রাতলি মাছেরও দেখা মিললো সমৃদ্ধ এ বাজারে। আর দেশি ৫ থেকে ১০ কেজির রুই, কাতলা, গ্রাসকার্প প্রভৃতি চাষের মাছ তো রয়েছেই।
প্রতিদিন কয়েকটি বড় ট্রলার ভেড়ে দড়াটানার ঘাটে। তাই সামুদ্রিক গাঙ চিতল, রূপচাঁদা, বাইন, ঢেলা, গোলপাতা, ভাদুড়, শাপলা,টেংরা, গাওল, কঙ্কন, ছুরি প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায় এ বাজারে। ইলিশ কিন্তু অধরা নয় এখানে। সামুদ্রিক ইলিশ পাওয়া যায় প্রচুর সংখ্যক।
জ্যান্ত টাটকা মাছ সম্পর্কে ব্যবসায়ী ইউনুস বলেন, সদর উপজেলার মধ্যে অনেকগুলো ঘের রয়েছে। তাই অনেক সময় জ্যান্ত ও টাটকা মাছ এখানে দাম বেশি হলেও পাওয়া যায়। জুলাই, আগস্টের দিকে মাছ বেশি মেলে। আবার জানুয়ারিতে ঘের শুকানো শুরু হলে মাছের দাম কমবে।
এই মাছ শুধু বাগেরহাটের মানুষ নয়, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় বলেও জানান তিনি। আর এ জেলার এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে জেলে বা মৎস্য ব্যবসায়ী পাওয়া যাবে না। এ অভিমত এলাকাবাসীর।
পর্যটকরা চাইলে প্রত্ন সম্পদ, সুন্দরবন দেখার পাশপাশি ঢুঁ মারতে পারেন একবার এ বাজারে। পারসে, ট্যাংরার ছটফটানি দেখার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতেও পারে!
অারও পড়ুন
**‘উলুঘ খানের’ ঘোড়া দীঘি টানছে পর্যটক (ভিডিও)
** বাগেরহাটের মিনি কুয়েত!
** পরিযায়ী পাখি যাচ্ছে পর্যটক-ব্যবসায়ীর পেটে
** সুন্দরে এতো হিংসে কেন!
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এএ/এইচএ