এম ভি মধুমতি (ঢাকা-খুলনা) জাহাজ থেকে: একসময় জলপথে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য বণিকরা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ঢাকায় আসতেন বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে। জাহাজ, লঞ্চ ও নৌকা চলাচলে সারাবছর ব্যস্ত থাকতো নদীটি।
বেশ কয়েক বছর ধরে নদীর দুই পাড়ে অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। এমনভাবে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে যেনো নদীটিকেই গিলে ফেলছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এম ভি মধুমতি জাহাজে মংলার উদ্দেশে যাত্রাপথে দেখা যায় নদীর এ করুণ দশা। নদীর উভয়পাশে একেবারে পাড়ঘেঁষে মসজিদ ও মাদ্রাসার সাইনবোর্ডে লক্ষ্য করা যায়।
লালকুঠি ঘাট থেকে এম ভি মধুমতি ছেড়ে আসার পথে গেন্ডারিয়া আর্সিন গেট আসার পর থেকেই নদী দখলের চিত্র আরও ভালো করে নজরে আসে। এরপর পোস্তগোলা, শ্যামপুর, পাগলা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ- প্রতিটি পয়েন্টেই লক্ষ্য করা যায় কিছু না কিছু ব্যবসায়িক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বিপরীত পাশে নদীর পাড়ঘেঁষে সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের নামে একটি কলেজ গড়ে উঠেছে। এরপর কিছু পথ অতিক্রম করা মাত্রই দেখা যায় একটি মাদ্রাসার সাইনবোর্ড।
যেভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, ঠিক এর সঙ্গে যেনো পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠেছে ইটভাটা।
বুড়িগঙ্গার এখন এমনই দশা, যেখানে একটি জাহাজ চললে অন্য আরেকটি লঞ্চ অতিক্রম করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত নদীর কিছু না কিছু অংশ চলে যাচ্ছে কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে।
নদীর এই করুণ দশা চাক্ষুষ হয় যখন নারায়ণগঞ্জ পার হওয়ার সময় একটি প্রাইভেট জাহাজ পশ্চিম পাশ থেকে এসে এম ভি মধুমতিকে ধাক্কা দেয়। মধুমতির রিজার্ভ মাস্টার ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বার বার মাইকে ওই জাহাজটিকে পশ্চিম দিকে চলে যেতে বললেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ধাক্কা লেগে যায়। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এ নিয়ে কথা হয় এম ভি মধুমতির রিজার্ভ মাস্টার মাসুদ পারভেজের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বুড়িগঙ্গা প্রতিনিয়ত সরু হচ্ছে। নদীর দুই পাশ ঘেঁষে অসংখ্য ইটভাটা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও সরকারি সীমানা পিলার অতিক্রম করে নদীর জায়গা ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। যে কারণে আমাদের জাহাজ চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে দেওয়ার পর বেসরকারি জাহাজগুলো যেভাবে তাড়াহুড়ো করে তাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের (বেসরকারি জাহাজ) নিষেধ করলেও শোনেন না। তারা যাত্রী তোলার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করেন।
বুড়িগঙ্গায় জাহাজ চলাচলের উপযোগী রাখতে হলে অবশ্যই এর দুই পাড়ের দখল বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সবার স্বার্থে বেসরকারি জাহাজগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে বলে জানান এমভি মধুমতির মাস্টার।
আর পড়ুন...
** মধুমতিতে আয়েশি ভ্রমণ
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এসএম/এসএনএস