দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: চারদিকে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। নেই কোনো সড়কবাতি বা আলোর ফোয়ারা।
অন্ধকারের মাঝে কুপি আর সৌরবিদ্যুতের আলো দেখে মনে হবে, যেনো জোনাকিরা খেলা করছে। সাগরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বসতি। বলছি সুন্দরবনের দুবলার চরের কথা।
অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, পাঁচ মাসের মৌসুমে প্রায় ছয় হাজার তিনশো জেলে এখানে এসে মাছ ধরেন। তাদের আহরিত লইট্যা, ফাইস্যা, রূপচাঁদা, ছুরি, তেলো ফাইস্যা, চিংড়িসহ নানাপদের মাছ থেকে প্রস্তত হয় শুঁটকি। এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়।
বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে ওঠা এই চরকে অনেকে শুঁটকি পল্লীও বলে থাকেন। দুবলার চরে দিনের চাইতে সন্ধ্যায় ঘোরা বেশি উপভোগ্য। তবে যাদের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে অভ্যেস নেই, তাদের জন্য দুবলার চর নয়।
কেননা সন্ধ্যার পর যখন সাগরপাড় ধরে হাঁটতে থাকবেন, বিশেষ করে শীতের সময় ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগবে কানে-মুখে; সেইসঙ্গে উত্তাল সাগরের শো শো গর্জনে যে কারও গা ছম ছম করবে!
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দুবলার চরের প্রবেশ মুখ আলোর কোল বাজার ও সাগর তীর দিয়ে হাঁটার সময় এমন অভিজ্ঞতা হয়।
আগেই বলছিলাম, ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে যখন জেলেরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে হাঁটতে থাকেন তখন লাইটগুলোকে জোনাকি পোকার মতো মনে হয়।
সাগরে নোঙর ফেলে জাহাজ ও লঞ্চগুলো বসে থাকে জোয়ারের আশায়। এসব জাহাজের আলো-অন্ধকার রাতের সাগর তীরের সৌন্দর্য্য আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
আলোর কোল বাজারে বিকেল থেকে সন্ধ্যা গড়াতেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- জেলে, শুঁটকি শ্রমিক, আড়তদার, ব্যবসায়ী, বন বিভাগের কর্মীসহ পর্যটকরা।
জাহাজ, লঞ্চ বা ট্রলার থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে নাকে ছুটে আসে শুঁটকির গন্ধ। এটি দুবলার চরের বিশেষত্ব। বালুর উপর জাল বা মাচা পেতে মণ-কে-মণ মাছ এনে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। এরপর একটু শুকালেই তার ভেতর থেকে বাছাই করে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হচ্ছে শুঁটকি।
প্রতি মৌসুমে সাগরে জেলেদের মাছধরা, শুঁটকি প্রস্তুতের কর্মযজ্ঞ ও দুবলার চরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন।
** সরু হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা
** হাড়বাড়িয়ায় লাল শাপলার মিষ্টি পুকুর
** মধুমতিতে আয়েশি ভ্রমণ
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এসএম /এসএনএস