ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

জেলেদের প্রাণ দুবলার চরের ‘নিউমার্কেট’

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
জেলেদের প্রাণ দুবলার চরের ‘নিউমার্কেট’ দুবলার চরে জেলেদের নিত্যদিনের বিনোদনের স্থান ‘নিউমার্কেট’-ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল ও মানজারুল ইসলাম

সুন্দরবনের দুবলার চরে জেলেদের নিত্যদিনের বাজার, বিনোদন আর অবসর কাটানোর অন্যতম স্থান ‘নিউমার্কেট’।

দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: সুন্দরবনের দুবলার চরে জেলেদের নিত্যদিনের বাজার, বিনোদন আর অবসর কাটানোর অন্যতম স্থান ‘নিউমার্কেট’।

দুবলার চরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা জেলে পল্লীর একটু ভিতরের দিকে ২৫-৩০টি দোকান নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি বাজার।

এই বাজারটিকেই জেলেরা বলেন ‘নিউমার্কেট’।

সকাল হলেই ট্রলার নিয়ে সাগরে ছুটে চলা। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর রাতে ট্রলার নিয়ে ফের ডেরায় ফেরা। ফিরেই তো কাজ শেষ নয়। এতো মাছ ধুয়ে শুকাতে দেওয়া, আগের দিনের শুকাতে দেওয়া মাছের পরিচর্যা করা। কাজের কী আর শেষ আছে!
দুবলার চরেই রয়েছে জেলেদের বিনোদনের নানা আয়োজন-ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল ও মানজারুল ইসলাম
সারাদিন এতো কাজের ভিড়ে একটু প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া, পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, নিত্যদিনের বাজার, একটু বিনোদন আর অবসর কাটানোর অন্যতম স্থান এই নিউমার্কেট।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে ঘুরে দেখা গেলো, তখনও বাজারটি জমজমাট। কেউ বাজার করছেন, কেউ দাড়ি কামাচ্ছেন, কেউ দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউবা আবার গানের আসরে মশগুল।

পুরো দুবলার চরে বার থেকে পনের হাজার জেলে ও মাছ শ্রমিকের অস্থায়ী বাস হলেও, ওই স্থানটিতে রয়েছে প্রায় আট থেকে দশ হাজার জেলের অস্থায়ী নিবাস। আশেপাশে আরও দু’টি ছোট বাজার থাকলেও এ বাজারটিই অপেক্ষাকৃত প্রাণবন্ত।
দুবলার চরের একটি রেস্টুরেন্টে মিস্টির পসরা সাজিয়েছেন দোকানি-ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল ও মানজারুল ইসলাম
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট থেকে ব্যবসায়ীরা এ বাজারে কাঁচামাল, তরিতরকারি, মুদি সামগ্রী, কাপড়চোপড়, শীতের কাপড়, হার্ডওয়্যার, লেদ মেশিন, সেলুন, ফার্মেসি, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জিনিসের দোকান দেন।
দুবলার চরে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও সোলার বাতিতে আলোকিত এ বাজার। এখানে নির্মিত হয়েছে তিনটি অস্থায়ী মসজিদ আর একটি মন্দির।

অক্টোবরের ১৪-১৫ তারিখ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে চার মাস মাছ ধরার জন্য এ চরে জেলেরা অবস্থান করেন।

এ বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী গাউস বাংলানিউজকে জানান, এখানে দোকান করতে কোনো ভাড়া দেওয়া লাগে না। তবে বনবিভাগকে রাজস্ব দিতে হয়।
প্রতিদিন সাতশো থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

বাজারের ফার্মেসির মালিক আনোয়ার জানান, দুবলার চরের জেলেদের চিকিৎসার জন্য এখানে কোনো পাস করা ডাক্তার নেই। জেলেদের অসুখ-বিসুখ থেকে শুরু করে কাটা-ছেঁড়া পর্যন্ত সবই তাকে দেখতে হয় ও করতে হয়।
বাজারে এরকম আরও দু’টি ফার্মেসি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুবলার চরের একটি রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যায় জেলেদের আড্ডা-ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল ও মানজারুল ইসলাম
রোববার সকালে কানার মাথায় দেখা গেলো, দুই নৌকার মাঝে চাপ খেয়ে গুরুতর আহত এক জেলেকে দড়ির স্ট্রেচারে করে নৌকায় তোলা হচ্ছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া আনোয়ারের সাহেবের পক্ষে সম্ভব হবে না। এমন ঘটনায় এ দ্বীপের জেলেরা অসহায়ই বটে।
 

আরও পড়ুন...

** বনরক্ষীদের জীবনই অরক্ষিত
** মংলা হতে পারে সুন্দরবন ভ্রমণের প্রবেশদ্বার (ভিডিও)
** গাইড থেকে ট্যুর অপারেটর

সহযোগিতায়
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এমআই/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।