বাগেরহাট ঘুরে: হযরত খান জাহানের (র.) বসতভিটার ধ্বংসাবশেষ এবং তার নির্মিত প্রাচীন রাস্তা ঘুরে দেখার পর যাত্রা হলো ‘রণবিজয়পুর মসজিদ’র উদ্দেশে। ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের মগরা গ্রাম থেকে সুন্দরঘোনা গ্রামের কাঁঠালতলা পর্যন্ত প্রাচীন সড়কটি দেখে, সেখানেই স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শে টমটমযোগে এক গম্বুজ বিশিষ্ট রণবিজয়পুর মসজিদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু।
টমটম নামিয়ে দিলো বাগেরহাট-খুলনা সড়কে রণবিজয়পুরের কাছে একটি মোড়ে। সেই মোড় পেরিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে এক গম্বুজের সবচেয়ে বড় রণবিজয়পুর মসজিদের খোঁজ চাইলে তারা সামনে এগোতে বলেন। মিনিট দশেক হেঁটে কাজী বাড়ি এলাকায় সেই মসজিদের কাছে যেতেই মনে হলো, ঐতিহ্যের যে মসজিদ খুঁজতে রণবিজয়পুরে, এটির কাঠামো-গড়ন তেমন নয়। একজন এগিয়ে এসে বোঝালেন, মোড়ে ভুল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি আসলে ‘পাগলা পীরের মাজার’ মসজিদ। রণবিজয়পুর মসজিদটি পেছনেই।
অগত্যা আবার পেছনে। এবার খান জাহানের মাজার মোড় থেকে উত্তর দিকে যে রাস্তা রণবিজয়পুর গ্রামে ঢুকেছে, সেটি ধরে হাঁটা শুরু। কিছুক্ষণ পরই ফকিরবাড়ি চৌরাস্তা মোড়। আর এই বাড়ির প্রবেশপথে গাছ-গাছালির ছায়াঘেরা পরিবেশে দাঁড়িয়ে আনুমানিক ৬শ বছর আগের তৈরি মসজিদটি।

খান জাহানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর দরিয়া খাঁর এ মসজিদটি মুসলিম শাসন যুগের সর্ববৃহৎ এক গম্বুজ মসজিদ। সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ারও। এটি গড়ে তোলা হয়েছে সীমানাসহ ১৬ শতক জমির উপর।
মসজিদটির পরিচিতিতে বলা হয়েছে, ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত মসজিদটি বর্গাকারে (১৮.৪৯ মিটার X ১৮.৪৯ মিটার) নির্মিত। চার মসজিদের পূর্ব দিকের প্রাচীরে রয়েছে তিনটি দরজা (মাঝখানের দরজা গ্রিলের কলাপসিবল, পাশের দু’টি লোহার)। এছাড়াও এর উত্তর ও দক্ষিণ দিকেও রয়েছে তিনটি করে দরজা (লোহার)। পুর্ব দিকের তিন দরজা বরাবর মসজিদের পশ্চিমের দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলঙ্কৃত মিহরাব। মসজিদের কার্নিশ সামান্য বাঁকা এবং বুরুজগুলো গোলাকার, যা কার্নিশের উপর পর্যন্ত ছড়ানো।

খান জাহান ও তার অনুসারীদের প্রয়াণের পর খলিফাতাবাদের অন্যান্য স্থাপনা অরক্ষিত হয়ে যাওয়ার যে বিপর্যয় শুরু হয়েছিল, এর ধারাবাহিকতায় বিশ শতকের মাঝামাঝি এসে বিস্মৃত হয়ে পড়েছিল দরিয়া খাঁর মসজিদও। ছাদ ভেঙে এটি পরিত্যক্ত পর্যন্ত হয়ে যায়। পরে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বোধোদয়ের ফলে একসময় এটিকে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়।
দরিয়া খাঁর মসজিদটিতে প্রায় ৪০ বছর ধরে ইমামতি করছেন হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান। মসজিদটির আগেকার ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাকিস্তান শাসনামলে (১৯৬১) দরিয়া খাঁ মসজিদকে সংরক্ষিত স্থাপনা বলে ঘোষণা করা হয়। এরপর সেসময়কার সরকার ও পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার এর ব্যাপক সংস্কার করে। একসময় পরিত্যক্ত, এমনকি মসজিদের উপর গাছ-গাছালি চেপে বসায় এতে জীবজন্তু চলাচল করলেও সংস্কারের ফলে এতে আবার এবাদত-বন্দেগি শুরু হয়।

ইমাম জানান, মসজিদে এখন শুক্রবারে সর্বোচ্চ ৩শ লোক নামাজ পড়তে পারে। পাঞ্জেগানা নামাজেও লোক হয়, তবে তুলনামূলক কম।
এলাকার মুসল্লি ও প্রবীণরা এটিকে দরিয়া খাঁর মসজিদ বলেই চেনেন জানিয়ে হাফেজ হাবিবুর রহমান বলেন, ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখতে এলে অনেক পর্যটকই এই মসজিদ ঘুরে যান।
আরও পড়ুন
** বাগেরহাটে মধ্যযুগীয় সড়কের পথ ধরে
** ফের জাগছে খান জাহানের খলিফাতাবাদ নগর!
** শতভাগ বৃক্ষশোভিত বেতাগার সবুজছায়
** রিয়েলাইজেশন অব ডিজিটালাইজেশন
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এইচএ/এএ/এসআরএস/এসএনএস
