খুলনা থেকে: খুলনার পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। অর্জন বলা যায় খুবই সামান্য।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিষয়টি জানাচ্ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান।
তিনি বলেন, আমরা রূপসা সেতুকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি। সেতু থেকে ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দূরে ইকোপার্ক গড়ে তোলা হবে। এরই মধ্যে ৩৫ দশমিক ৮৬ একর জমি খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই পার্কে থাকবে চার কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। থাকবে লেক, লেকের ওপর থাকবে কাঠের তৈরি সেতু। থাকবে ভাসমান রেস্টুরেন্ট, কৃত্রিম ঝরনা, ফিশ মিউজিয়াম, অ্যাকুরিয়াম ও বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। প্রবেশদ্বারেই থাকবে সুন্দরবনের ম্যাপ। থাকবে ভিডিও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। দর্শনার্থীরা প্রবেশদ্বারেই জানতে পারবেন কোথায় কি আছে এবং কি তার দায়িত্ব-কর্তব্য।
রূপসা নদীতে ক্রুজ চালুর কথাও সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রমোদতরী থাকবে। যেগুলোতে উঠে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে আসা যাবে। যেন মানুষ নৌভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন। একই সঙ্গে নৌকায় থেকে ইলিশ মাছ ধরার দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা রাখতে চান বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
নাজমুল আহসান জানান, সুন্দরবনের বাইরে অনেক কিছু রয়েছে দেখার মতো। কিন্তু আমরা সেগুলোকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি। যেগুলো পর্যটক টানার জন্য খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপের কারণেও পিছিয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, এই জেলায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি। রয়েছে প্রফুল্ল রায়ের বাড়ি। চুকনগর বধ্যভূমি, গল্লামারী স্মৃতিসৌধ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধিসৌধ। কিন্তু এগুলো আমরা সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। কয়রায় রয়েছে খুব কাছ থেকে সুন্দরবন দেখার জন্য ভিউ পয়েন্ট।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, পর্যটকদের জন্য আলাদা ডেস্ক খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে ডেস্ক সার্বক্ষণিক পর্যটকদের সহায়তা ও সেবা দেবে। সঙ্গে থাকছে খুলনার পর্যটনের জন্য ফেসবুকের আলাদা পেজ। যেখানে পোস্ট দিয়েও সহায়তা পাওয়া যাবে জেলা প্রশাসনের।
অল্পদিন হলো খুলনা জেলায় যোগদান করেছেন নাজমুল আহসান। তার কাছে প্রশ্ন ছিল আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি? জবাবে বলেন, এখানে একটি বড় বিষয় রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। রয়েছে লবণাক্ততা। যে কারণে বেশিরভাগ জমিতে মাত্র একটি ফসল উৎপাদন হয়।
শহরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলাবদ্ধতা। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এজন্য জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে। ময়ুরী খালসহ ২৩ নদীতে অবৈধ দখলের কারণে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধতা দূর করতে নদীগুলো দখলমুক্ত করতে চান তিনি। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা গেলে জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।
নাজমুল আহসান এর আগে সাতক্ষীরা জেলার ডিসি ছিলেন। সেখানে আইসিটিতে এগিয়ে থাকার জন্য শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। কিন্তু খুলনা আইসিটিতে তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে, আর এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, গত জুলাই মাস পর্যন্ত মাত্র একটি উপজেলায় শতভাগ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ছিল। ডিসেম্বরে এসে আরও ৮টি উপজেলায় শতভাগ স্কুল মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের আওতায় এসেছে।
আইসিটির উন্নয়নের জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য কুয়েটের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জানালেন জেলার লোকজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বললেন লোকজন খুবই সহজ সরল ও আন্তরিক। আর তাই বিরামহীম কাজ করার প্রেরণা পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পাতা রয়েছে তাতে কেউ অভিযোগ পোস্ট দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখানে সেবার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত। লোকজনের এখন পারিবারিক কিংবা জমি-জমা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়েও তার কাছে আসছেন। এক্ষেত্রেও কাউকে নিরাশ হতে হচ্ছে না, তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করেন সমস্যা সমাধানের।
প্রতিনিয়ত নানান বিষয়ে গণশুনানি চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে বসেই নানা রকম জটিলতার সমাধান দিচ্ছেন। যে কারণে অল্প দিনেই খুলনাবাসীর ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এখানে কাজ বেশ উপভোগ করছেন নাজমুল হাসান।
বিধান অনুযায়ী একদিন হয়তো অন্য স্থানে যেতে হবে। যাওয়ার সময় উন্নত ডিজিটাল খুলনা দেখে যেতে চান বলে জানালেন নাজমুল আহসান।
** বাগেরহাট ভায়া সুন্দরবন, এখনই সময়
** গ্রাম-সুন্দরবনের সেফগার্ড ভোলা নদী (ভিডিও)
** খেজুর রসের গন্ধে মাতাল!
** কুসংস্কারে ভরা দীঘি সম্ভাবনায় ঠাসা
** বাগেরহাট ডিসির কষ্ট ও বাস্তবতা
** চিত্রায় প্লেনের ছোঁয়া
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এসআই/এসআইএস/আরআই/এএ