খুলনা থেকে: সন্ধ্যার আধারে রাস্তা-ঘাটে সোডিয়াম লাইট ও গাড়ির হেড লাইটের আলো। দুর হতে অসংখ্য জোনাকি পোকার মত আলো ছড়াচ্ছে খুলনা শহরের বাসা-বাড়ি আর দোকানপাটের বাতিগুলো।
খুলনা সদর থেকে ভাঙ্গাচোরা বাইপাস সড়ক হয়ে যখন খান জাহান আলী সেতু পৌঁছাই। তখন সন্ধ্যার আধার। শুধু রূপসার বুক চিরে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি লাল-সাদা রঙের অভূতপূর্ব আলো বিলিয়ে দিচ্ছে চারপাশকে। আর যাকে ঘিরে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের ভীড়।
সেতুতে লাগানো লাইটের আলোর প্রতিবিম্ব রূপসার নদীতে পড়ায় অন্ধকারেও চিকচিক করে উঠছে পানি। সন্ধ্যার মোহনীয় এই দৃশ্য দেখে যে কোনো ভ্রমণ পিপাসু মানুষ মুগ্ধ হবে। তাই তো, বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতুকে ঘিরে বাড়তে থাকে বেড়াতে আসা মানুষের সংখ্যা। বন্ধু-বান্ধব,পরিবার পরিজন বা কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে এসেছেন রূপসা সেতুর আলোর ব্যঞ্জনায় মুগ্ধ হতে।
রাতের রূপসা সেতু সৌন্দর্যকে কাজে লাগে সেতুর পাশে বাইপাস সড়কের দু্‘পাশে নানা ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসীয়রা। এজন্য ব্রিজের দু‘পাশে চটপটি-ফুচকা,বার্গার,চিকেন ফ্রাইসহ ফাস্টফুডের দোকান দেখা গেল।
সেতুটির বাইপাস সড়কগুলোর পাশে ও মাঝামাঝি ফাঁকা স্থানে লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি গোলাপ,লাল,কমলা রঙের রঙ্গণ,নয়নতারা,হাসনাহেনা, গাঁদাসহ নানা রঙের বাহারি পাতা বাহারের গাছ। ফুল ও গাছপালার ছোঁয়ায় সেতুটি হয়ে উঠেছে আরো আকৃষরণীয়। যা বেড়াতে আসা মানুষের চোখকে দিচ্ছে অবিরাম প্রশান্তি।
রূপসা সেতুকে এভাবে আলোক উজ্জ্বল করে তুলে ধরেছে শতশত ফোক লাইট। এই লাইটগুলোর সৌন্দর্য বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনার হাত থেকে মুক্তি দেয় যানবাহনগুলোকেও।
রূপসা সেতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো দুই প্রান্তে দুটি করে মোট চারটি পেচানো সিঁড়ি। পেচানো সিঁড়িগুলো বেয়ে মূল সেতু থেকে নিচে নামলাম।
নেমেই অবাক! সেতুর নিচে বিশাল জায়গা জুড়ে ফাঁকা স্থান। যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু ফাস্টফুড,ফুচকা-চটপটির দোকান। দোকানগুলোতে বাংলা ও হিন্দি বাজছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ও দেখা গেল। তবে সেতু বিভাগ চাইলে জায়গাটি সুন্দর করে সাজিয়ে পযর্টন বান্ধব করে দিতে পারে।
ফাঁকা স্থানটি পেরিয়ে একটু এগুলে নদী এরপর সেতুর মূল পিলারগুলো। ৮টি মূল পিলার বসানোর জায়গাগুলো সুন্দর করে নিমার্ণ করা হয়েছে। সুন্দরের সঙ্গে রয়েছে পিলারের নিরাপত্তার বোধও। তবে স্থানটি সাজালে মিনি পিকনিক স্পট হয়ে যেত।
সেতু বিভাগের কাজ থেকে ইজারা নিয়ে রূপসা সেতু রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা জেএসআইসি সেল জেভি। সেতুর পযর্টন সম্ভবনা নিয়ে কথা হয় সংস্থাটির সহকারি প্রকৌশলী তৌফিক আহমেদ রনির সঙ্গে।
বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নদীতে প্রমোদ তরী দিয়ে দর্শনার্থীদের বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই সেতুর নিচে দর্শানর্থীদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা জন্য মৌখিকভাবে সেতু বিভাগে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্রিজের মুল যে পিলার রয়েছে সেখানে ২০০ মানুষ বসতে পারবে, সেখানে ছোট ছোট নৌকা করে দর্শানার্থীদের ঘুরার সুযোগ দেওয়া যেত, তবে ব্রিজের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করে এটা করা হচ্ছে না।
রূপসা সেতুকে দেশের অন্যতম পযর্টন কেন্দ্র করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রূপসা ঘাট সংস্কার হলে এ সেতুতে প্রচুর দর্শনার্থী আগমন ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা শহর থেকে রূপসা সেতুর দূরত্ব ৪.৮০ কিলোমিটার। খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার এই সেতুর পশ্চিম দিকে সংযোগ সড়কের দীর্ঘ ৩৬০ মিটার,মূল সেতুর দীর্ঘ ৫৪০ মিটার এবং পূর্বে দিকের সংযোগ সড়ক ৯‘শ মিটার।
শহর থেকে প্রাইভেট কার বা ইজি বাইক নিয়ে যেতে পারেন রূপসা সেতুতে। ভাড়া পড়বে প্রাইভেট কারে ৫০০ টাকা আর ইজি বাইকে ১০০ টাকা মাত্র। একটি সন্ধ্যা চমৎকার কাটবে এই গ্যারান্টি যারা গিয়েছেন সবাই দেবেন।
** খুলনার স্পন্দন রুপসার ঘাট!
** হিম শীতে ডাকাতিয়া বিলে
** বাগেরহাটের পালপাড়ার বাসনকোসন সারাদেশে
** সপ্তদশ শতকের বিস্ময় ‘অযোধ্যা মঠ’
** ‘এখানে বড়-ছোট নাই, যাই করেন দশ টাকা’!
** বিমানবন্দর রেলস্টেশনে অকেজো মাইক!
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২১,২০১৬
এমসি/এসআইএস/এসআরএস