দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: দুবলার চরের দোঁআশ জমিনে ফসলের আবাদ যে হবে না তা নয়। কিন্তু যে চর বছরে সাত মাস পানির নিচে থাকে, সেখানে ধান-সবজির চাষ কীভাবে হবে!
অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুবলার চরের জীবন।

এরপরও ছন বা হোগলা পাতার বেড়া বেয়ে আকাশ ছুঁতে চায় কুমড়ো লতা। শুঁটকি মাচার পাশে চিলতে জায়গা খুঁড়ে করা মুলাক্ষেতে পরম মমতায় পানি ঢালেন আশাশুনি থেকে আসা জেলে জিয়াউল। শুধু জিয়াউল নন, তার মতো অনেকেই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরও শখ করে লাউ, কুমড়া, মুলার গাছ লাগান। তাদের সঙ্গে সঙ্গে এদেরও জীবনসীমা ওই পাঁচমাস।

এমনিতে মাছ ধরা, শুঁটকির কাজ বা দোকানদারি করে খুব একটা সময় যে কারও থাকে এমন নয়। এরপরও সৌখিন ক্ষেতমালিক সাগর থেকে তুলে আনা লইট্যা-দাতিনার কড়াইয়ে একটু মুলা কেটে দেবেন কিংবা মাছঝোলের সঙ্গে লাউশাক- এতেই লাউ-কুমড়া-মুলার জীবন স্বার্থক।

বাজারের সবজি বিক্রেতা খোরশেদ আলী জানান, খুলনার বাজারের তুলনায় খুব বেশি দামের পার্থক্য নয় এখানে। দেখা গেলো, ফুলকপি ওখানে কেনা ২০ টাকা, সেইসঙ্গে আনার খরচ যোগ করে এখানে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এভাবেই সব সবজিতে আনার খরচ মিলিয়ে সীমিত লাভ করা হয়।

বাজারে এরকম সবজির দোকান রয়েছে তিন থেকে চারটি। আলু ৩৫ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, কুমড়া ২০ টাকা, শালগম ২০ টাকা, মুলা ২০, ফুলকপি ৩৫, বাঁধাকপি ৩৫, মরিচ ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ২৫ টাকা ও রসুন ৬০ টাকা করে বিক্রি হয়।

দোকানে এমন সব সবজি তোলা হয় যেগুলো দ্রুত পচনশীন নয়। চাহিদা অনুযায়ী খুলনা থেকে সপ্তাহান্তর সদাই আনা হয় বলে জানান খোরশেদ আলী।
তিন মৌসুম হলো এখানে সবজির ব্যবসা করছেন। নিজ এলাকায়ও একই ব্যবসা রয়েছে তার। দুবলার চর ডুবে গেলে ঝুড়ি-পাটি গুছিয়ে তার মতো বাকিরাও নিজ নিজ এলাকায় পাড়ি জমান। অক্টোবর ঘুরতেই আবার এখানে। এভাবেই চলছে দুবলার চরের বেগুন-কুমড়া-লাউ-শালগমের জীবন।

অারও পড়ুন...
** দুবলার চরের জেলেদের জীবনগাথা
** না দেখলেই নয় হাড়বাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র!
** এইসব দিনরাত্রি রয়ে যাবে গাবখান-বলেশ্বরের বাঁকে
** বুড়িগঙ্গা-মেঘনা ছুঁয়ে পশুর নদীর ডাকে
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এসএনএস/আরবি