ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

লবণ-কেমিক্যাল মুক্ত দুবলার চরের শুঁটকি

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
লবণ-কেমিক্যাল মুক্ত দুবলার চরের শুঁটকি লবণ-কেমিক্যাল মুক্ত দুবলার চরের শুঁটকি / ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলাম

পূর্ব সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের দুবলার চরসহ এর আশেপাশের ৭টি চরে চলছে শুঁটকি মৌসুম। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া এ মৌসুম চলবে পুরো ফেব্রুয়ারি...

দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: পূর্ব সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের দুবলার চরসহ এর আশেপাশের ৭টি চরে চলছে শুঁটকি মৌসুম। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া এ মৌসুম চলবে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে।

দুবলার চরের জেলেরা জানান, সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর ও নারকেলবাড়িয়ায় বারো থেকে পনের হাজার জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রস্তুতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সাধারণত লইট্যা, ছুরি, রূপচাঁদা, চিংড়ি, চুনা, চান্দা, খয়রা, চকলেট, পারসে প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার মাছের শুঁটকি প্রস্তুত করা হয় চরগুলোতে।

দুবলার চর ঘুরে ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাছ আহরণ, শুঁটকি প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে লবণ ও কেমিক্যালমুক্ত দুবলার চরের শুঁটকি।
চরে মাছের শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে / ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলামখুলনার রামপাল থেকে আসা জেলে মাহবুব জানান, জেলেরা প্রতিদিনের মাছ ট্রলারে করে এনে রোদে শুকান। ভালো করে শুকানো হলে সেগুলো ঘরে তোলা হয়। ভালোভাবে শুকানো শুঁটকি বস্তায় ভরে কার্গো জাহাজে করে দেশে-বিদেশে পাঠানো হয়। মাছ আহরণ, শুঁটকি প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো পর্যায়ে এখানে লবণ কিংবা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। তাই এ শুঁটকির চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি।

মাছ আহরণ
খুব সকালে ট্রলারে করে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েন জেলেরা। প্রতি ট্রলারে থাকে ছয় থেকে সাতজন জেলে। উপকূল থেকে দুই-তিনঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে সমুদ্র মোহনায় তারা মাছ ধরেন। মাছ ধরতে ব্যবহৃত হয় বেহুন্দীসহ ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের ফাঁস জাল।  রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে / ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলামদিনভর মাছ ধরে রাত নয়টা-দশটা নাগাদ তারা উপকূলে ফিরে আসেন। দিনের মাছ দিনে নিয়ে আসায় বরফ নিয়ে যাওয়ার দরকার হয় না জেলেদের।

শুঁটকি প্রস্তুতকরণ
আগে থেকেই মাছ শুকানোর চাতালের উপর ছন দিয়ে তৈরি বেডের উপর নেট দিয়ে রাখা হয়। যেখানে ভূমি অসমতল কিংবা স্যাতসেঁতে, সেখানে মাছ শুকানোর জন্য মাচা তৈরি করা হয়। লইট্যা মাছ শুকানোর জন্য বাঁশের বেড়া তৈরি করা হয়।

রাত্রে মাছগুলো ছনের বেড কিংবা মাচার উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সকালে সেখান থেকে লইট্যা, ছুরিসহ বড় বড় মাছগুলো আলাদা করে বাঁশের বেড়ায় শুকাতে দেওয়া হয়। বাকি মাছগুলো ছনের বেড কিংবা মাচায় শুকানো হয়।

বাঁশের বেড়ায় শুকানো লইট্যা, ছুরি ও অন্যান্য মাছগুলো সাধারণত চার-পাঁচ দিনেই শুকিয়ে যায়। বেডে মাছগুলো শুকাতে দুই-তিন দিন লাগে।

ভালোভাবে শুকানোর পর বিভিন্ন জাতের মাছগুলো আলাদা করে তা সংরক্ষণ করা হয়। এরপর শুঁটকিগুলো বস্তায় ভরে বাজারজাতকরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়।
জেলে ব্যস্ত রোদে শুঁটকি শুকাতে / ছবি: ডিএইচ বাদল ও মানজারুল ইসলাম

রোদে শুকানো হয় বলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাছ ভালোভাবে শুকানো যায় না। সেসময় শুঁটকিতে পোকা লাগে ও নষ্ট হয়ে যায়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর প্রায় ২৬ হাজার কুইন্টাল শুঁটকি প্রস্তুত করেন জেলেরা। এর থেকে প্রায় এক কোটি ২৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে সুন্দরবন বন বিভাগ।

আরও পড়ুন...
***ঝড়ের চেয়েও বেশি ভয় দস্যুতে
** জেলেদের প্রাণ দুবলার চরের ‘নিউমার্কেট’
** বনরক্ষীদের জীবনই অরক্ষিত
** মংলা হতে পারে সুন্দরবন ভ্রমণের প্রবেশদ্বার (ভিডিও)
** গাইড থেকে ট্যুর অপারেটর


সহযোগিতায়

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এমআই/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।