কটকা (সুন্দরবন) থেকে: বন্যপ্রাণীর আধার কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্র। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের জেটি থেকে শুরু হয় বন্যপ্রাণীর পদচারণা।
কোনো ট্যুরিস্ট বাদাম বা মুড়ি ছিটিয়ে দিলে মুহূর্তের মধ্যে বানরের ঝাঁক এসে হাজির। একইভাবে হরিণের জন্য গাছের ডাল ভেঙে দিলে ওরা দল বেঁধে এসে খায়।
শত শত বন্যপ্রাণীর এমন ঘনিষ্ঠ পদচারণা দেখার জন্যই দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা কটকা ভ্রমণে আসেন।
বন্যপ্রাণীদের অবাধে চলাফেরা দেখতে পর্যটকদের আগ্রহের কমতি থাকে না। তাইতো প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে আসেন। সুন্দরবনে যতো পর্যটকের আগমন ঘটে এর অধিকাংশই কটককেন্দ্রিক। কারণ, বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ দেখতে চাইলে কটকা অতুলনীয়।
পর্যটকদের দেখলে বানর, হরিণ, বন্য মোরগও যেনো আনন্দ পায়। পর্যটকরা যখন মুড়ি, বাদাম ছুড়ে দেন তখন দৌড়ে আসে বানরের দল। আবার যখন গাছের ডাল ভেঙে দেন, চলে আসে হরিণের পাল। এভাবে সারাদিন বন্যপ্রাণীদের খাবারের জন্য ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
কিন্তু পর্যটকদের অসর্তকতায় দুঃখ বাড়ছে কটকার, বিপন্ন হচ্ছে এখানকার প্রাণীবৈচিত্র্য। বন বিভাগের ওয়াক ওয়ে দিয়ে হেঁটে গেলে দেখা যায়, এখানে-সেখানে চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, কাগজের ঠোঙা, জুতা, পলিথিনের ব্যাগ পড়ে রয়েছে।
বিশেষ করে জামতলা বনের ট্রেইল (পায়ে হাঁটার পথ) ধরে হাঁটতে থাকলে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়বে একটি ওয়াচ টাওয়ার। এ ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো বনের চিত্র দেখা যায়। ওয়াচ টাওয়ারের নিচে ডাস্টবিন থাকলেও পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট পড়ে রয়েছে সেটিরই আশপাশে।
এ বিষয়ে কয়েকজন পর্যটকই বললেন, পর্যটকরা যখন চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল ছুড়ে ফেলে তখন যেনো দুঃখ পায় কটকা। দিন দিন কটকার পরিবেশ বিপন্ন করে তুলছেন পর্যটকরা।
কটকায় বনের ভেতর প্রায় দেড়-দুই কিমি কাঠের ওয়াক ওয়ে রয়েছে। এই ওয়ে দিয়ে নিঃশব্দে হাঁটলে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। তবে হইহল্লা করলে হরিণ তো দূরের কথা, বানরও আসে না বললেন বন বিভাগের এক কর্মী।
কটকা স্পটে রয়েছে টাইগার টিলা নামে একটি জায়গা। জোয়ারের সময় চারদিক যখন পানিতে ডুবে যায় তখন হরিণের আশ্রয় কেন্দ্র হয় এই টিলা। আর হরিণ শিকারে আসে টাইগার। সেখান থেকে জায়গাটি টাইগার টিলা বা পয়েন্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে কে বা কারা নাম দিয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কটকার বন বিভাগের বোটম্যান মো. মোস্তফা হায়দার জানান, সুন্দরবনের বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট কটকায় আসেন। এখানে খালের ওপর রয়েছে জামতলা ব্রিজ। সারি সারি জাম গাছ ব্রিজের পাশে। একটি ওয়াচ টাওয়ারও রয়েছে কটকায়। যে টাওয়ার থেকে বনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।
তিনি বলেন, শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) এখানে কমপক্ষে ২০টি লঞ্চ এসেছিল। প্রতিদিন এভাবে শত শত লোক কটকায় আসেন। পর্যটকের আগমন কোনো সমস্যা নয়, যদি না যত্রতত্র ময়লা ফেলেন এবং কোনো হইচই করেন।
মোস্তফা হায়দার বলেন, বিদেশি ট্যুরিস্টরা অনেক শৃঙ্খলা মেনে চলেন। তারা চিপস বা বিস্কুটের প্যাকেট থাকলে পকেটে করে নিয়ে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে দেন। আর আমাদের দেশের ট্যুরিস্টরা এখানে-সেখানে ফেলে দেন। এসব ক্ষেত্রে সচেতনতা দরকার।
তার সঙ্গে আলাপে জানা গেল, কটকায় ট্যুরিস্টদের বসার জন্য দু’টি গোলঘর ও একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। কটকা অফিসে একজন ফরেস্টারের নেতৃত্বে দশজন কর্মী থাকেন। তাদের মধ্যে একজন ফরেস্ট গার্ড, আটজন বোট ম্যান। নির্জন বনে সরকারি দায়িত্ব পালনে জীবন বাজি রেখে চলছেন এই বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কটকার আশপাশে কোনো বাজার না থাকায় পাথরঘাটা ও খুলনা থেকে চাল, ডাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আসেন তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের নেই কোনো ঝুঁকি ভাতা বা রেশন।
দেশের যেকোনো স্থান থেকে খুলনা, মংলা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট- এই চারটি স্থান থেকে রিজার্ভ লঞ্চ বা প্যাকেজে অন্যদের সঙ্গে কটকা আসা যায়। প্যাকেজে এলে কটকা ছাড়াও কচিখালী বিচ, হিরণ পয়েন্ট দেখা যায়। মংলা থেকে সাত থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে কটকা যেতে।
আরও পড়ুন:
**‘মংলায় ভালো হোটেল দরকার’
** রাতের দুবলার চর
** সরু হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা
** হাড়বাড়িয়ায় লাল শাপলার মিষ্টি পুকুর
** মধুমতিতে আয়েশি ভ্রমণ
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এসএম/এইচএ/এসএনএস