ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ফুলতলার দেশসেরা গামছা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
ফুলতলার দেশসেরা গামছা মানবৈচিত্র্যে সেরা ফুলতলার গামছা/ছবি: আসিফ আজিজ

দক্ষিণঢিহিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি দেখে ফেরার পর নির্ধারিত যাত্রা ফুলতলার গামছাপল্লীর উদ্দেশে।

ফুলতলা (খুলনা) ঘুরে: দক্ষিণঢিহিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি দেখে ফেরার পর নির্ধারিত যাত্রা ফুলতলার গামছাপল্লীর উদ্দেশে। বাজারে যে পল্লীতে গামছা বিক্রি করা হয় তারমধ্যে একটির নাম গামছা চান্দিনা, আরেকটির নাম উত্তর বাজার গামছা চান্দিনা।

প্রথমটি খুচরা বিক্রির, আর দ্বিতীয়টিতে বেশি চলে পাইকারি কারবার।

গোধূলি বেলায় দক্ষিণঢিহি থেকে যে টমটমে চেপে ফুলতলা বাজারের উদ্দেশে যাত্রা, তার চালকই আগে জানিয়ে দিলেন উত্তর বাজার গামছা চান্দিনা বসে প্রতি বুধবার ও রোববার। সুতরাং বারের কাঁটা মিললো না বিধায় এ যাত্রায় সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। তবে খোলা আছে গামছা চান্দিনা। সেখানেই পৌঁছালো টমটম। শীতের আলসেমি পেয়ে বসছিলো যেন দোকানিদের/ ছবি: আসিফ আজিজফুলতলা বাজারের রফির সড়কে গামছা চান্দিনায় সেসময় চলছিলো বিকিকিনি। তবে জমজমাট বলতে যে শব্দ আছে, তার পারিভাষিক সার্থকতার মতো নয়। হয়তো ‘সন্ধ্যে’ গড়িয়েছে বলে!

এই গামছা চান্দিনায় ৮-১০টি দোকান। এখানে গামছা প্রধানত বিক্রি হলেও সমানভাবে দেখা গেলো লুঙ্গি-তোয়ালেও। তবে উত্তর বাজার গামছা চান্দিনায় ৫০-৬০টিরও বেশি দোকান রয়েছে। যেখানে কেবল গামছাই বিক্রি হয়। বিক্রি কম অথবা পৌষের সন্ধ্যে নেমেছে বলে খানিকটা আলসেমির ছাপ দেখা যাচ্ছিল বিক্রেতাদের মধ্যে। দু’একজন বিক্রেতা ক্রেতার সঙ্গে আলাপ চালাতে থাকলেও কয়েকজন হুডি সোয়েটারের গায়ে হাত ঢুকিয়ে পাশের বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করছিলেন।

বিকিকিনির খবর নিতে চাইলে তেমন আগ্রহ দেখা গেলো না। তবে ক্যামেরা বের হতেই সাংবাদিক পরিচয় বুঝতে পেরে আগ্রহভরে কথা বলতে থাকলেন দু’চারজন। এদের একজন আবুল কালাম। ‘ফুলতলার গামছার হালহকিকত’ কেমন জানতে চাইলে বললেন এখানকার গামছাশিল্পেরই হতাশা নিয়ে। হতাশার গল্পের আগে জেনে নেওয়া হলো এখন কেমন চলছে ফুলতলার গামছা।

তার সঙ্গে আলাপে জানা গেল, ফুলতলার গামছার বিশেষ নকশার মধ্যে রয়েছে- ‘ঝুড়ি’, ‘চেক’, ‘ঝালকাঠি’ ও ‘লেডিস’। এখানে বোনা গামছার জমিন এবং পাড়ের রঙ ও নকশার মধ্যে আলাদা বিশেষত্ব হলো, সবক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা রঙ ও নকশার ব্যবহার হয়। সাদা, লাল, হলুদ, খয়েরি, নীলসহ প্রায় সব রঙের সুতো ব্যবহার করা হয় ফুলতলার গামছার নিখুঁত বুননে। মানবৈচিত্র্যে সেরা ফুলতলার গামছা, গামছা দেখাচ্ছেন এক দোকানি/ছবি: আসিফ আজিজ

আবুল কালাম জানালেন, বাজারটা ফুলতলার হলেও এখন এখানে কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকেও গামছা আসে। সে গামছাও বিক্রি হয়। বাজারে ফুলতলার গামছা থাকলেও মান বিবেচনাটা মাথায় না রেখে অনেকে দর বিবেচনায় নিয়ে বাইরের জেলার গামছা কিনে নিয়ে যান। তবে যারা পাইকার আসেন অথবা নিয়মিত ক্রেতা, তারা ঠিকই এসে নিয়ে যান ফুলতলার গামছা।

কালামের কথার সূত্র ধরে তার পাশের দোকানি মুরাদুল ইসলাম বলেন, এখনও এ গামছার ক্রেতা আছে দেশ-বিদেশে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও দরের দিক থেকে ক্রেতার মনোপূত না হওয়ায় ফুলপুরের গামছা মূল্যায়ন পাচ্ছে না।

ফুলতলার গামছা বুননের ঐতিহ্য দুই থেকে আড়াইশ’ বছরের হলেও প্রচুর চাহিদা তৈরি হয় আশির দশকের শুরু থেকে। বাহারি রঙ, নকশা, নিখুঁত বুনন ও মানবৈচিত্রের কারণে এ অঞ্চলের গামছার কদর তৈরি হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে, এমনকি বিদেশেও। সেসময় ফুলতলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তাঁতকল ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এবং অবমূল্যায়নে এ শিল্প এখন টিকে থাকার সংগ্রাম করছে। পৌষের শীতের আলসেমি চেপে বসার সুযোগ পাচ্ছে বিক্রেতাদের ওপর।

কালাম-মুরাদুলরা বলেন, ফুলতলার গামছা সারাদেশেই পরিচিত। কিন্তু এখন খোদ ফুলতলায়ই অন্য অঞ্চলের গামছা চলছে সমানতালে। যদিও মান বিবেচনায় ধরলে দাম বেশি রাখা হচ্ছে না।

ফুলতলার সবচেয়ে বড় গামছা ৪ হাত দৈর্ঘ্য ও দুই হাত প্রস্থের, বাজারটিতে এ ধরনের গামছা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে মান অনুসারে সর্বোচ্চ ২৬০ টাকায়। এখানকার সাড়ে ৩ হাত দৈর্ঘ্য ও দেড় হাত প্রস্থের গামছাটি খুচরায় বিক্রি হচ্ছে মান অনুসারে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত। আর একই প্রস্থের ও ৩ হাত দৈর্ঘ্যের গামছাটি খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। এখানে অন্য জেলা থেকে যে গামছাগুলো আসে তার মধ্যে ৫ হাতের গামছাও আছে। তবে ফুলতলার গামছার তুলনায় এসব গামছার দাম কম। মানবৈচিত্র্যে সেরা ফুলতলার গামছা, গামছা দেখাচ্ছেন এক দোকানি/ছবি: আসিফ আজিজফুলতলা বাজারের এ গামছার যোগান আসে উপজেলা শহরের অদূরের আলকা ও দামোদর গ্রাম থেকে। সেখানে প্রায় দেড়শ’ পরিবার এখন এ গামছা শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছেন। গামছা চান্দিনায় যাওয়ার পর আবুল কালাম যে হতাশার গল্প বলতে চেয়েছেন তা শুনে রাত্রি গড়ানোর পরও পা বাড়লো আলকা ও দামোদর গ্রামের তাঁতপল্লীর দিকে।

আরও পড়ুন...

**সবচেয়ে বড় এক গম্বুজের মসজিদ বাগেরহাটে

**বাগেরহাটে মধ্যযুগীয় সড়কের পথ ধরে

**ফের জাগছে খান জাহানের খলিফাতাবাদ নগর!

**শতভাগ বৃক্ষশোভিত বেতাগার সবুজছায়

**রিয়েলাইজেশন অব ডিজিটালাইজেশন

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬

এইচএ/এএ/

সহযোগিতায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।