কটকা অভয়ারণ্যের টাইগার টিলায় বাঘের দেখা না মিললেও যাওয়া-আসার পথে দেখা গেলো পাল পাল হরিণ, বন্য শূকর, বাঁদর আর চেনা-অচেনা নানা পাখি।
মূলত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলে এবং বর্ষাকালে চারদিক ডুবে গেলে উঁচু ঢিবির ওপর বসে থাকে বাঘ, যে কারণে পর্যটকদের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে গেছে ‘টাইগার টিলা’।

সাধারণত মানুষ দেখলে গভীর বনে পালায় হরিণ, তবে এখানকার চিত্র কিছুটা আলাদা। দূর থেকে তাকিয়ে থাকে, যেনো কিছু বলতে চায়!
ওদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে ভালো পাতা দেখে কেওড়া গাছের ডাল ভেঙে শুকনো মাটিতে ফেলা হয়। প্রথম পনেরো মিনিট হরিণের পাল বুঝে উঠতে সময় নেয়- কেন আমরা দূরে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে!

বিপদের আশঙ্কা নেই নিশ্চিত হওয়ার পরেই এক পা- দু’ পা করে এগিয়ে পাতা খেতে শুরু করে কয়েকটি হরিণ। তাদের দেখে দৌড়ে এসে জড়ো হয় প্রায় অর্ধশত হরিণ। এক পালা পাতা মুহূর্তে সাবার করে ফেলে হরিণের পাল।
কাদা মাড়িয়ে ওয়াকওয়ের দিকে ফেরার সময় আমাদের দিকে এগিয়ে আসে আরেক দল হরিণ। সতর্ক নয়, করুণ দৃষ্টি তাদের- যেনো বলতে চায়, আমরাও না খেয়ে আছি।
কটকা সৈকত থেকে সিডর উঠে এসে মুচড়ে নিয়ে যায় এই অংশের অধিকাংশ গাছ। গত বর্ষায় গাছের গোড়ায় বালি জমে মারা গেছে আরও কিছু। ভেতরের কেওড়া, সুন্দরী এবং অন্যান্য ফল গাছ যা রয়েছে- তার অধিকাংশ গাছের পাতাই হরিণের নাগালের বাইরে। তাই পাতা এবং ফল খাওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় বাঁদরগুলো দিকে। ওদের হাত ফোসকে পড়া ফল-পাতা কুড়িয়ে খায় হরিণগুলো। ফল গাছ যা রয়েছে তাতে খাদ্য চাহিদা পূরণ হওয়া মুশকিল।

বন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে আলাপ করে বাঁদরগুলোর জন্য আমরা শুকনা মুড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। টাইগার টিলা থেকে ফিরে ওয়াকওয়ের প্রবেশ মুখে পৌঁছাতে বন কাঁপিয়ে এলো একদল বাঁদর, যেনো কেউ সংবাদ দিয়েছে আমরা এসেছি!
শুকনা মুড়ি ছিটিয়ে দিতেই গিলতে শুরু করলো বাঁদরের দল। অতিরিক্ত মুড়ি নেওয়ায় দলপতির সঙ্গে মারামারিও বেঁধে গেলো একজনের। দেলোয়ার হোসেন তখনও আমাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে। বললেন, খাবারের খুব সংকট এদের। গাছ কমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত ফল-পাতাও পায় না এই অংশের হরিণ, বাঁদর।
** বিপদের কাণ্ডারী বদর কবুতর
** দুবলার চরে নাম সংকীর্তন-ভাবগীতে খণ্ডকালীন জীবন
** বাঘের পায়ের ছাপ সন্ধানে ওয়াকওয়ে ধরে দেড় কিলোমিটার
** মংলা পোর্টে এক রাত
** বিস্মৃতির অতলে বরিশালের উপকথা
**‘জোনাকি’ ভরা বুড়িগঙ্গা
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এটি
