ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

বিলীনের পথে জমিদার বাড়ি

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
বিলীনের পথে জমিদার বাড়ি বিলীনের পথে রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি। ছবি মানজারুল

যখন জমিদারের জমিদারি ছিলো তখন আশপাশের লোক তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সাহসটুকু পেতো না। সেই জমিদারের জমিদারিও নেই, দাপটও নেই। বরং বিলীনের পথে জমিদার বাড়ি।

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে: যখন জমিদারের জমিদারি ছিলো তখন আশপাশের লোক তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সাহসটুকু পেতো না। সেই জমিদারের জমিদারিও নেই, দাপটও নেই।

বরং বিলীনের পথে জমিদার বাড়ি।
 
বলছি, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার হরিচরণ রায় চৌধুরীর বাড়ির কথা। শ্যামনগর থানার দুই কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি দুই তলা বিশিষ্ট। যার প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন। জমিদার বাড়ির মূল ভবনটি ১৯ মিটার লম্বা, এর ভেতরে ছিলো আটটি পিলার ছিলো। বিলীনের পথে রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি।  ছবি মানজারুল
 
হরিচরণ রায় চৌধুরী ছিলেন একজন প্রভাবশালী জমিদার। এ বাড়িতে প্রতি বছর জাঁকজমক করে দুর্গোৎসব পালিত হতো। দুর্গা পূজার জন্য ছিলো স্থায়ী পাকা প্যান্ডেল, যা এখন বিলীন হয়ে গেছে। যার ৩০ গজ পশ্চিমে দিঘির পাড়ে যে নহবতখানা ছিলো সেটি থেকে ইট, শুরকি খসে খসে পড়ছে, অনেকটা এরই মধ্যে নষ্টও হয়ে গেছে।
 
হরিচরণ রায় চৌধুরীর বাড়ির দক্ষিণ পাশে  একটি জলাশয় ছিলো। যার চারদিকে দখলের পর ভরাট করে গড়ে উঠেছে ঘড়বাড়ি। তবে এখনও পুকুরের মতো ছোট জলাশয়টি দেখা যায়। এই জলাশয়ের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এক চূড়াবিশিষ্ট দু’টি শিব মন্দির ছিলো। এই জোড়া শিব মন্দিরের কাছের বকুল গাছটি অবশ্য আজও রয়েছে। তবে শিব মন্দিরের অবস্থা অত্যন্ত ভঙ্গুর। মন্দিরের গায়ের ইট শুড়কি আগেই খসতে শুরু করেছে। বিলীনের পথে রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি।  ছবি মানজারুল
 
জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে যে পুকুর ছিলো সেখানে এখন খেলার মাঠ আর জমিদার বাড়ির দাতব্য চিকিৎসালয় এখন রহমান শেখের বাড়ি।
 
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে জমিদার বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির বাড়িটির এখন শুধু মূল ভবনের কিছু অংশ রয়েছে। বাকিটা ক্রমেই স্থানীয়দের কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
 
জমিদার বাড়ির ছাদ  কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল টালি ও কাঠের আঁড়া। সেই টালিগুলো এখন খসে খসে পড়ছে, আঁড়াগুলো অনেক সরকারি কর্মকর্তার বাড়ির ফার্নিচারে পরিণত হয়েছে। বিলীনের পথে রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি।  ছবি মানজারুল
 
জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরীর নায়েব ছিলেন শিবপদ চক্রবর্তী। তার ছেলে শক্তি শেখর চক্রবর্তী এখন তিন নম্বর শ্যামনগর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর।
 
শক্তি শেখর চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, এই এলাকার পুরোটাই ছিলো রাজা রায় বাহাদুরের। এই জমিদার বাড়িতে আগে রেভিনিউ অফিস ছিলো। তখন যে অফিসার এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনিই বাড়ির কাঠ, খাটসহ অন্যান্য ফার্নিচার চুরি করেন। যা ছিল শাল-সেগুন গাছের।
 
বিলীনের পথে রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি।  ছবি মানজারুলতিনি বলেন, স্থানীয়রা জমিদারের বিশাল বাড়ির ইটগুলো একটি একটি করে নিয়ে যাচ্ছে। সব চুরি হয়ে যায়। কিন্তু দেখার কেউ নেই। আশপাশ দিয়ে যা কিছু ছিলো সেগুলো এখন অনেকটাই অতীত।     
 
একই গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ন কবির জানান, জমিদার বাড়ির সবকিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে। এই বাড়িটি দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করার পর এটাকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা দরকার।

** দুবলার চরের ‘ওসি’
** কটকার সুখ-দুঃখ
**‘মংলায় ভালো হোটেল দরকার’
** রাতের দুবলার চর
** সরু হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা
** হাড়বাড়িয়ায় লাল শাপলার মিষ্টি পুকুর
** মধুমতিতে আয়েশি ভ্রমণ
logo
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এসএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।