তালা (সাতক্ষীরা) থেকে: প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ। হলুদ আকৃতির প্রাচীন এ মসজিদটি আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলার তালা থানাধীন তেঁতুলিয়া গ্রামে।
যদিও মসজিদের আগের সেই অবয়ব আর নেই। অনেক জায়গায় বৃষ্টির পানি পড়ে কালচে হয়ে গেছে। কোথাও আবার ফাটল ধরেছে। ভবনের গা থেকে হলুদ রঙের চুন খসে খসে পড়ছে।
মসজিদটি বর্তমানে যাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তেঁতুলিয়া গ্রামের জমিদার ছালামাতুল্লাহ খান ১২৭০ বঙ্গাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে (১৪২৩) আজ অব্দি টিকে রয়েছে মসজিদটি। প্রায় ১৫৩ বছর বয়সী মসজিদে এখনও চলছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদের চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় মিলিয়ে এ মসজিদের রয়েছে আরও ১৬টি মিনার। সব মিলিয়ে মিনার সংখ্যা ২০টি। গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের মধ্যের পিলার সংখ্যা ২টি। গোলাকৃতি এ পিলারের বেড় ৩.২ মিটার। সাত দরজা বিশিষ্ট মসজিদের প্রত্যেকটি দরজার উচ্চতা ২.৩ মিটার ও প্রশস্ত ১.২ মিটার। প্রতিটি দরজার খিলান আধাগোলাকার কিন্তু তা বসানো হয়েছে চারকোণা ফ্রেমের উপর। সাধারণত গ্রেকো রোমান স্থাপত্যে এরকম দরজার ব্যবহার দেখা যায়।
মসজিদের মেঝে নির্মাণ করা হয়েছে ১.১ ভল্ট সমর্থিত খিলানের উপর। খিলানগুলো এমনভাবে নির্মিত যেনো নিম্নভূমির পানি সহজেই চলাচল করতে পারে। প্রতি সারিতে তিনটি করে মোট দু’টি সারিতে ৬টি গম্বুজ দিয়েই নির্মিত মসজিদ। মেঝেসহ এর সর্বত্র পালিশের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে এমন পদার্থ যা এটিকে করেছে মসৃণ হলুদাভ।
কথিত রয়েছে, মসজিদ নির্মাতার অপূর্ব কারুকাজ ও নির্মাণ শৈলী দেখে জমিদার মুগ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে এ ভয়েও ভীত হন যে, এই নির্মাতা যদি অক্ষত দেহে থাকেন তাহলে এরকম মসজিদ আরও নির্মাণ করতে পারেন। তাই জমিদারের হুকুমে মিস্ত্রীর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে নেওয়া হয় এবং দেওয়া হয় প্রচুর অর্থকড়ি।
মসজিদ নির্মানের পর ছালামাতুল্লাহ খানের দ্বিতীয় অধঃস্তন পুরুষ মিন্নাতউল্লাহ খান কলকাতা থেকে একজন ইমাম আনেন তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদের জন্য, যার নাম সৈয়দ আলম শাহ। তিনি ছিলেন ইরানি বংশভুত। আলম শাহ এর ছয় সন্তান ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। তারা হলেন- সৈয়দ মঈনউদ্দীন হাশেমী, সৈয়দ জালাল উদ্দিন হাসেমী, সৈয়দ শরফউদ্দীন হাশেমী ও কন্যা সৈয়দ সৈয়দা খাতুন।
সৈয়দ মঈনউদ্দীন হাশেমীর ছেলে ছিলেন কহিনূর আকবর বখদ হাশেমী। তার ছেলে সৈয়দ জুনায়েদ আকবর হাশেমী।
মসজিদের ইতিহাস তুলে ধরে সৈয়দ জুনায়েদ আকবর হাশেমী বাংলানিউজ জানান, জমিদাররা জমিদারি পরগনা দিতেন সূর্যাস্ত আইনুনাযায়ী (সূর্য্য ডোবার আগে যে খাজনা পরিশোধ না করতে পারলে জমিদারি বাজেয়াপ্ত)। সেই নিয়মী অনুযায়ী, রেজয়ানউল্লাহ খান বাহাদুর খাজনা দিতে না পারায় তখন জমিদারি অন্য যায়গায় চলে যাচ্ছিল। তাই আমার দাদা মইনুদ্দিন হাশেমী ও জালাল উদ্দিন হাশেমী একত্রিত হয়ে খাজনা পরিশোধ করেন, সেই থেকে জমিদারি আমাদের অধীনে চলে আসে।
তিনি বলেন, আমরা মসজিদটা হাশেমী স্টেট থেকে সরকারিভাবে স্থাপত্য বিভাগকে দিয়ে দিয়েছি। এই মসজিদে বসেই আগের জমিদাররা নানা দেন দরবার করতেন এবং অনেক সালিশ বিচারও করতেন।
** বিলীনের পথে জমিদার বাড়ি
** দুবলার চরের ‘ওসি’
** কটকার সুখ-দুঃখ
**‘মংলায় ভালো হোটেল দরকার’
** রাতের দুবলার চর
** সরু হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা
** হাড়বাড়িয়ায় লাল শাপলার মিষ্টি পুকুর
** মধুমতিতে আয়েশি ভ্রমণ
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এসএম/এসএনএস/জিপি