তবে আমার অপেক্ষা অনেক বেশি দীর্ঘ। এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপ (এজেএফ) টিম-২০১৭ এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ভানি জানিয়ে দেন, শনিবার (২২ জুলাই) দুপুর ২টার অাগে কেন্ট ভেলির সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে চেক-ইন করা যাবে না।
ভানি অাগেই জানান, এয়ারপোর্ট থেকে মোবাইলের সিম কিনে নিলে ভালো হবে। অামার গত দু’বারের অভিজ্ঞতায়, মুস্তাফা মার্টের সামনে থেকে সিম কেনার ইতিহাস সুবিধার নয়। এখানে সিংটেল, এমওয়ান ও স্টার হাব মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ব্যবসা করছে।
এর অাগে, তিন ঘণ্টার ফ্রি ওয়াইফাইতে তিনটি কোম্পানির বিভিন্ন প্যাকেজ দেখে নিলাম। সিংটেলের প্যাকেজ ঠিক করলাম, তবে স্টার হাবের নারী বিক্রেতার রূপ আমাকে কাছে টানলো। আর তাই ৩২ ডলারের প্যাকেজের জায়গায় কিনতে হলো ৫০ ডলারের প্যাকেজ ও সিম। তার হাসিমাখা মুখে বাড়তি ১৮ ডলার খরচের উপকারিতা শুনে এড়াতে পারিনি বিষয়টি।
টার্মিনাল তিনের ফ্লোরগুলোতে ঘুরতে থাকলাম। এখনকার দিনে মোবাইলে ফ্রি ওয়াইফাই রেখে ঘোরা কঠিন কাজ। তবে ঘুম তাড়াতে হাঁটাই শ্রেয়। এই টার্মিনালের লেভেল দুইতে বহির্গমন, লেভেল এক আগমন আর ট্যাক্সির। এছাড়া বেসমেন্ট এক ও দুইয়ে গাড়ি পার্কিং ও ট্রেন।
ধীরে ধীরে ভোরের অালো ফুটতে শুরু করে। টার্মিনালের বাইরে একটু ঘুরে দেখছিলাম। এদেশে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ অাইন বেশ কড়া। স্মোকিং কর্নার ছাড়া ধুমপান করলে অার অাপনার ভাগ্য খারাপ থাকলে ৩শ সিঙ্গাপুর ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৮ হাজার টাকা জরিমানা। তাই নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া ধুমপান করা যায় না। বেশ কয়েকটি দেশে দেখেছি, স্মোকিং কর্নারের অবস্থা খুব নোংরা থাকে। তবে এখানে কিন্তু সবকিছু সাবধানে। সিগারেট টানার পর পরিত্যক্ত ফিল্টার নির্দিষ্ট স্থানে না ফেললেই বেশিরভাগ সময় অাইনের প্যাঁচে পড়তে হয়।
যাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, ধুমপান করলে কে দেখবে পুরো শহরজুড়ে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, সিঙ্গাপুর প্রায় শতভাগ সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণে। এখানে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না বলেই প্রচলিত।
এই এয়ারপোর্টে ইংরেজি ছাড়াও সব সাইন মান্দারিন, মালয় ও তামিল ভাষায় লেখা রয়েছে। কারণ, এখানকার ভাষা ইংরেজি হলেও নাগরিকরা মূলত এই তিন জাতিগোষ্ঠীর। কেউ যেনো বঞ্চিত না হয়, সেই চেষ্টা।
হলিউডের বিখ্যাত ছবি দ্য টার্মিনালের কথা মনে পড়ছে। অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাঙ্ক দিনের পর দিন যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে অাটকে ছিলেন। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে প্রতিদিনই রিজেক্ট হচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে না ফিরে এয়ারপোর্টের ইন্টারন্যাশনাল প্যাসেঞ্জার জোনে অবস্থান করছিলেন। এমনকি একটি এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুর প্রেমেও পড়েন। অনেক কেবিন ক্রু'র দিকে তাকালাম। সেই নায়িকার মতো কারও চোখে পানি দেখলাম না। বরং সবার হাঁটায় ব্যস্ততার ছাপ।
এক বৃদ্ধাকে চোখে পড়লো, যিনি ওয়াইফাই চালু করবেন কীভাবে বুঝতে পারছেন না। মনে হলো চীন থেকে এসেছেন। সঙ্গের সুন্দরীকে ধারণা করা যায় তার কন্যা। আমার পাশের এক যাত্রীকে বৃদ্ধা এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড কী? তিনি জানেন না। চলে গেলেন বৃদ্ধা, মেয়ের সঙ্গে কথা বলছেন, চায়নিজ ভাষাই হবে। কারণ, কোরিয়া, জাপান, চায়নিজের পার্থক্য অামি করতে পারি না। হেল্প ডেস্কে গেলেই পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয় এবং সেটা কোথায় তাও আমি জানি। রাজকন্যাসহ রাজত্ব লাভের অাশার এগিয়ে গেলাম। চওড়া হাসিমুখ করে বললাম, ম্যাডাম, অার ইউ লুকিং ফর ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড?
চায়নাতেও সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে আমার মতো অনেক যুবকই যেচে সাহায্য করতে চাওয়ার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধার নিশ্চয়ই রয়েছে। অন্যদিকে তাকিয়েই বললেন, উই গট ইট। তবে অামি বুঝলাম, এটি শুধুই এড়িয়ে যাওয়া। আসলে পাসওয়ার্ড পাওয়ার কথা নয়।
যাইহোক, সকাল সাড়ে ৬টার দিকেই জমে ওঠে লেভেল ওয়ানের ম্যাকডোনাল্ডস। সকালে ব্রেকফাস্টের মেনুগুলোতে কফি অনিবার্য। প্রিমিয়াম রোস্টের সঙ্গে হ্যাসব্রাউন আর ডিমসহ চিকেন মাফিনের খরচ পড়ে গেলো ৩শ টাকার (পাঁচ সিঙ্গাপুর ডলার) ওপরে। সিম কেনার পর ডলারও খরচ করে হিসেব করতে হচ্ছে। হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্টে সিঙ্গাপুর ডলারের সংকট থাকায় কিনতে পারিনি। যা অাছে আবার ট্যক্সিতে যেতে হবে কেন্ট ভেলি। ক্ষুধার্ত পেটে গোগ্রাসে গিললেও কফিটা নিয়ে দুই ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করলাম। তবে ঘুমে অার চোখ খুলে রাখতে পারছিলাম না।
ব্যাগ-ব্যাগেজ আর কফি হাতে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে অাসি। ট্রলির উপরে রাখা ব্যাগে পা রেখে চেয়ারে শরীর হেলিয়ে দিলাম। ট্রেন স্টেশন বা অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে গিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুমানোর দক্ষতা অাগেই অর্জন করেছি। তাই চোখ বন্ধ করতে বেগ পেতে হলো না।
চোখ মেলে দেখি প্রায় ১২টা। এখন রওনা দেওয়াই যায়। এখানে ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়ালে এয়ারপোর্টের একজন কর্মচারী রয়েছেন যিনি ট্যাক্সিকে নির্দিষ্ট কাউন্টারে যেতে বলবেন এবং অাপনাকে ট্যাক্সি দেখিয়ে দেবেন। এ জন্য তার যেমন কোনো চার্জ নেই, তেমনি ট্যাক্সিতে উঠে যাবেন কি যাবেন না বা ভাড়া নিয়ে কখা বলা এখানে অকল্পনীয়।
কেন্ট ভেলির পথে ছুটে চলে ট্যক্সি। মাথায় ঘোর লাগছিল। সকালের দু’ঘণ্টা ঘুম খুব বেশি কাজে অাসেনি। যেনো চাঙ্গি এয়াপোর্টটাই ঘুরছিল মাথার ভেতরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
এমএন/এসএনএস
** সিঙ্গাপুর থেকে লিখছেন বাংলানিউজের মাজেদুল নয়ন