সূর্যের আলোয় ঝলমল করে উঠলো পুরো উপত্যকা। আমরা আজ সামদোর পথে পা বাড়াবো।
কিন্তু হিমালয়ের নিয়ম মেনে সেখানে পৌঁছাতে আরও প্রায় দুই ঘণ্টা লাগলো। সাড়ে ১২টার মধ্যেই সামদো পৌঁছে গেলাম। লজের রুমে গিয়ে ব্যাকপ্যাক ছেড়ে ডাইনিং রুমে। সেই আলু ভর্তা, ডিম ভাজি আর ডাল। ঝটপট খেয়ে রোদে বসে কিছুক্ষণ আরাম করে নেওয়া। মাল্লা পরামর্শ দিলো আজও হাইট গেইনে বের হতে। লজ লাগোয়া পাহাড়টাতে উঠতে লাগলাম আমরা। সামারগাওতেই আমরা ট্রি লাইন শেষ করে এসেছি। এখানে ছোট ছোট ঝোপঝাড়ও প্রায় বিরল। রুক্ষ পাহাড়ি উপত্যকায় শো শো শব্দে হাওয়ার দাপট চলছে সমানে। ইয়াকের গলায় বাঁধা ঘণ্টার আওয়াজ ভেসে আসছে নিচের উপত্যকা থেকে।
এখানকার স্থায়ী বাসিন্দারাও তিব্বতি। জানা গেলো অদূরেই তিব্বত সীমান্ত। বৃষ্টি বিরল অঞ্চলের ট্রেডমার্ক তিব্বতিয়ান আবহাওয়া পুরো মাত্রায় সক্রিয় এখানে। ঠিক মাথার উপরেই ছয় হাজার মিটারি সামদো পিক। আমরা আবার চার হাজার মিটারে এসে ক্ষান্ত দিলাম। উপরে আরও প্রেয়ার ফ্ল্যাগ দেখে বোঝা গেলো সে পর্যন্তও মানুষের যাতায়াত রয়েছে। সূর্য দ্রুত পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে গ্রাস করছে আধার। বাড়ছে হাওয়ার দাপটও। আমরা নেমে আসলাম লজে।
কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো এলাকা ঢেকে গেলো মেঘে। তারপর সেই একই রুটিন। ডাইনিং রুমে তাস পিটিয়ে ডিনার তারপর হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে রুমে এসে বিছানার আশ্রয়ে।
সকালে ঘুম ভাঙলো কিছুটা টেনশন নিয়ে। আমাদের আজকের গন্তব্য ধরমশালার উচ্চতা ৪ হাজার ৪৬০ মিটার। এর আগে এতো উচ্চতায় রাত কাটানো হয়নি। যদি কোনো অসুস্থতায় আক্রান্ত হই। সে সব মন থেকে ঝেড়ে ফেলে তৈরি হয়ে নিলাম। নাস্তা সেরে ধরমশালার পথে আস্তে আস্তে এগিয়ে চললাম আমরা। একেবারে জাপানি স্টাইলের হাঁটা যাকে বলে।
তাড়াহুড়ো না করে আস্তে আস্তে চড়াই ভাঙা। আজ রাস্তায় উৎরাই নেই বললেই চলে। মানাসলুর অনেকটা দেখা যাচ্ছিলো। ক্যাম্প ওয়ান থেকে উপরে দিকে যাওয়ার রুট বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন মুহিত ভাই। এক একটা চড়াই ভাঙছি, তার উপর গিয়ে খানিকটা বিশ্রাম। ধূসর রুক্ষ ময়দানের মাঝে কে যেন সরু সাদা রেখা টেনে দিয়েছে। নিচের উপত্যকায় ইয়াক চরে বেড়াচ্ছে খাবারের খোঁজে। তারও বেশ কিছুটা দূরে জলের রেখা বের হয়েছে নাম না জানা পর্বতের গ্লেসিয়ার থেকে। আমরা দু’টি ল্যান্ড স্লাইড জোনও পার হলাম। অবশেষে বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ ধরমশালা দেখা গেলো দূর থেকে। লারকে বেস ক্যাম্প ও পাসের আগে এটিই শেষ আশ্রয় আমাদের। এখানে কোনো স্থায়ী বসতি নেই। কিছু পাথুরে ঘর আর বেশিরভাগ-ই অস্থায়ী তাঁবু। প্রথমবারের মতো আজ তাঁবুবাসের অভিজ্ঞতা হবে আমার। প্রথমবারের মতো ল্যামার গিয়ারের সঙ্গেও দেখা হলো। ল্যামার গিয়ার হিমালয়ের প্রবাদপ্রতিম এক প্রজাতির শকুন। বিশাল ডানা মেলে সে খাবারের খোঁজে বের হয়েছে।
হাতের নাগালে বরফ পাহাড়, বীরেন্দ্র লেকে মুগ্ধতা
সুন্দরতম গ্রাম লোহ, সামনে চোখ ধাঁধানো মানাসলু
১১ ঘণ্টা চড়াই-উৎরাই বেয়ে ৮৬৫০ ফুট উচ্চতার নামরুংয়ে
বুড়িগন্ধাকীর সাসপেনশন ব্রিজ পেরিয়ে ফিলিম
পাহাড়ের গায়ে ঝোলা নেপালের একমাত্র ক্লিপ ব্রিজ
কখনও সরু ফিতা কখনও এবড়ো-থেবড়ো পথে যাত্রা
চারিদিকে বান্দরবান বান্দরবান গন্ধ, সামনে আরক্ষেত
ধুলোবালি গিলতে গিলতে ট্রেকিং শুরুর আরুঘাট (পর্ব-৩)
পর্বতারোহণের কেনাকাটা সেরে কাঙ্ক্ষিত যাত্রা (পর্ব-২)
হিমালয়ের মানাসলু ট্রেকিংয়ের অদম্য নেশায় যাত্রা (পর্ব-১)
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এএ