আমাদের বেসক্যাম্পের দক্ষিণে ঘণ্টাখানেক হাঁটলে শুরু হয়েছে হাই ক্যাম্পে যাওয়ার চড়াই। অনেকটা পথ এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে সবাই উঠে পড়েছে। আজ ক্লাইম্বিং গাইডদের উপরের যাওয়ার কথা হাইক্যাম্প তৈরি করতে। ক্লাইম্বিংয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। হাইক্যাম্প তৈরি হয়ে গেলে আগামীকাল সবাই মিলে সেখানে চলে যাবে। রাতে হাইক্যাম্প থেকেই সামিট পুশ। মাল্লা গতবছর লারকে সামিট করেছে। উপরের রুটের ব্যাপারে তার ধারণা আছে। আজ আমরা বেসক্যাম্পে বিশ্রাম নেবো।
কিন্তু চিন্তার ভাঁজ ফেললো সোজা পূর্বে সামদোর দিকে জমা হওয়া ঘন কালো মেঘ। সামারগাওয়ে থাকতেই আবহাওয়া খারাপের পূর্বাভাসের ব্যাপারে জানিয়েছিলো মাল্লা। এরই মাঝে হালকা বাতাস বইছে। ধীরে ধীরে সেই মেঘের সমুদ্র বেস ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে আসছে। স্যুপ নুডুলস দিয়ে নাস্তা সেরে নিলাম। তারপর শেরপারা চলে গেলো রোপ ফিক্স করতে। আমরা নূর ভাইদের তাঁবুর ভেতরে এসে বসলাম।
কিছু সময়ের জন্য রোদ উঠেছিলো। কিন্তু মেঘ এসে সূর্য ঢেকে দিতেই ঠাণ্ডার মাত্রা বাড়তে লাগলো। বাতাসের বেগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। তাঁবু থেকে মুখ বের করে আমরা গাইডদের চলাফেরা নজরে রাখছিলাম। তারা ইতোমধ্যেই কোলে উঠে গেছে। এক সময় উপরে বরফের দেয়ালের আড়ালে হারিয়ে গেলো। আবহাওয়া কিন্তু খারাপ হচ্ছে। অনেক পরে নিজের তাঁবুতে এসে হালকা তন্দ্রা মতো এসেছিলো।
তাঁবুর গায়ে বাতাসের ঝাপটার শব্দে চোখ খুলে শুনি বাইরে বরফ পড়ার আওয়াজ। বাতাসের বেগ অনেক বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে মাল্লারা ফিরে এলো। তারা হাইক্যাম্প স্থাপন করেছে। তাদের বর্ণনা থেকে বোঝা গেলো বেশ বিপজ্জনক জায়গা সেটি। উপর থেকে পাথর পড়ার ভয় রয়েছে। আশপাশে ক্রেভাসও আছে। আবহাওয়া পুরোপুরি খারাপ। আস্তে আস্তে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো।
ভয়ঙ্কর বাতাস বইছে। স্নো ফলের মাত্রাও বেড়েছে। আমরা তাড়াতাড়ি রাতের খাওয়া সেরে যার যার তাঁবুতে ঢুকে গেলাম। কিন্তু ঘুম উধাও। এক পর্যায়ে মনে হলো বাতাস তাঁবু উড়িয়ে নেবে। ব্লিজার্ড শুরু হয়ে গেছে। তাতে আবার নতুন মাত্রা যোগ করলো দূর থেকে ভেসে আসা অ্যাভেলাঞ্জের ভয়াবহ গর্জন। শেষ পর্যন্ত মাঝরাতের দিকে থামলো সেই তাণ্ডব। ঘুমও এলো।
রৌদ্রজ্জ্বল চমৎকার এক সকালে আমরা জেগে উঠলাম। চারপাশ একেবারে ধবধবে সাদা হয়ে আছে। গতকাল যেখানে ছিটেফোঁটা ঘাসের চিহ্ন ছিল সেখানে আজ গোঁড়ালি অবধি বরফ। আকাশে মেঘের দেখা নেই। রাতের সেই পাগুলে বাতাসও উধাও। আমাদের খুশি দেখে কে। একেবারে যুথসই সামিটের আবহাওয়া। পাঁচ ক্লাইম্বার প্রস্তুত হয়ে নিলেন। দেখা গেলো সব কিছু গোছগাছের পর একেক জনের ব্যাকপ্যাকের ওজন দাঁড়িয়েছে বারো থেকে পনেরো কেজির মতো। কারও অবশ্য তা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। আবহাওয়া ভালো হয়ে গেছে সেটিই বড় ব্যাপার।
নাস্তার পর পাঁচজনজন সদস্য এবং তিনজন ক্লাইম্বিং গাইড রওয়ানা হয়ে গেলেন। বেস ক্যাম্পে রয়ে গেলাম আমি ও একজন পোর্টার। তাদের বিদায় দিয়ে তাঁবুর বাইরেই বসে রইলাম। ঘণ্টাখানেক পর ক্র্যাম্পন পয়েন্ট পৌঁছাতেই দৃষ্টিসীমায় এলো পুরো দল। সেখানে হার্নেস, আইসবুট পরে উপরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় কিছুটা সময় ব্যয় হলো। এমন সময়ই নজরে এলো কালকের সেই একই জায়গা থেকে আবার মেঘ জমা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭
এএ
১৫৪১৯ ফুট উচ্চতায় নীলাভ পানির ছোট্ট বিস্ময় লেক!
আঁধার ঠেলে উঁকি দিলো আগুনরঙা মানাসলু
হাতের নাগালে বরফ পাহাড়, বীরেন্দ্র লেকে মুগ্ধতা
সুন্দরতম গ্রাম লোহ, সামনে চোখ ধাঁধানো মানাসলু
১১ ঘণ্টা চড়াই-উৎরাই বেয়ে ৮৬৫০ ফুট উচ্চতার নামরুংয়ে
বুড়িগন্ধাকীর সাসপেনশন ব্রিজ পেরিয়ে ফিলিম
পাহাড়ের গায়ে ঝোলা নেপালের একমাত্র ক্লিপ ব্রিজ
কখনও সরু ফিতা কখনও এবড়ো-থেবড়ো পথে যাত্রা
চারিদিকে বান্দরবান বান্দরবান গন্ধ, সামনে আরক্ষেত