ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল হয়ে যাত্রীরা সব তখন আসনে। বেলা ঠিক দুপুর ১১টা বেজে ৪৫ মিনিট।
বোয়িং ৭৩৭-৮০০, এয়ারক্রাফটি একেবারে যাত্রীতে ঠাসা। যেন পেট ভরে টইটম্বুর করে নিয়েছে উড়োজাহাজটি। ১৬২টি ইকোনমি আর আটটি বিজনেস ক্লাসের আসনের সবক’টি পরিপূর্ণ।
ফ্লাইট ক্যাপ্টেন ইমতিয়াজের কণ্ঠে ভেসে এলো, ‘কক্সবাজারের আকাশ ঝলমলে। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আশা করি ৪৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাবো’।
কেবিন ক্রুরা ততক্ষণে উড়োজাহাজ ভ্রমণের নিয়মাবলী জানিয়ে শেষ করলেন পত্রিকা বিতরণের কাজও।
শুরু হলো যাত্রা। মুহূর্তেই ১৮ হাজার ফিট ওপরে উঠে গেল প্লেন। বাতাসের কারণে খানিকটা ঝাঁকুনি দিলেও কয়েক সেকেন্ডেই স্থিতাবস্তায় চলে এলো।
দশ মিনিট ধরে চলার পরপরই লাস্যময়ী কেবিন ক্রুরা স্ন্যাকস নিয়ে হাজির। কেক আর বার্গার খাওয়া শেষ না হতেই ক্যাপ্টেন ইমতিয়াজের গলার স্বর ভেসে এলো আবারও, ‘দশ মিনিটের মধ্যেই আমরা অবতরণ করবো। আর মাত্র তিন কিলোমিটার’।
ক্যাপ্টেনের এমন বার্তা শুনে পাশের যাত্রী বলে উঠলেন, ‘কত সহজ হয়ে গেছে। এই উড়োজাহাজে না এলে মাত্র ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার! ভাড়াও কম। সময়ও বাঁচল, কষ্টও হলো না’।
যে পরিবহন নিয়ে কথা হচ্ছে সেটি অন্য কোনোটি নয়, দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করে বিদেশি ভ্রমণকারীদেরও মন জিতে নেওয়া এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা।
‘ফ্লাই ফাস্ট-ফ্লাই সেফ’ স্লোগান নিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ৭৬ আসনবিশিষ্ট দু’টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-যশোর ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে প্রথম আকাশে ডানা মেলে ইউএস-বাংলা।
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ সব রুট ছাড়াও সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, দোহা, মাস্কাট, কাঠমান্ডু ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সটি।
ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বহরে চারটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ ও চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে।
২০১৮ সালের মধ্যে আরও তিনটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০, তিনটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং দু’টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এয়ারক্রাফট প্লেনবহরে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ইউএস-বাংলার। খুব শিগগির বাংলাদেশের প্রথম উড়োজাহাজ সংস্থা হিসেবে চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক গন্তব্য গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বর্তমানে সপ্তাহে প্রায় ৩০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। যাত্রা শুরুর পর থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে প্রায় ৩৫ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করেছে তারা, যা বাংলাদেশের এভিয়েশন ইতিহাসে একটি রেকর্ড।
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফটির সিট প্ল্যান খুবই চমৎকার বলে মনে হয়েছে যাত্রীদের কাছে। প্রায় প্রতিটি সারিতেই রয়েছে জানালা। দুই সারির মাঝে পা ছড়িয়ে দেওয়ার পর্যাপ্ত জায়গা। ফলে বেশ আরাম করেই বসা যায়।
ক্যাপ্টেন ইমতিয়াজের ঘোষণার পরপর যাত্রীদের নজর এবার প্লেনের জানালার দিকে। দরিয়ানগরখ্যাত পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে একটু পাখির চোখে দেখে নেওয়াই সবার মূল আগ্রহ। জানালার পাশে সিট না হওয়ায় একজন অন্যজনের নাকের ডগায় এসেই উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলেন। মন ভরে না বিধায় অনেককেই দেখা গেল মোবাইল ফোনের সুইচ অন করে দু-চারটে ফটো তুলতে। যদিও সেটা তুলে দিতে সাহায্য করছিলেন জানালার পাশের সিটের যাত্রীরাই।
ধীরে ধীরে প্লেন স্পর্শ করলো বিমানবন্দরের রানওয়ে। যেন খুব যতন করে হাজার হাজার ফিট ওপর থেকে নামিয়ে আনা হলো। কোনো রকম ঝাঁকি বা ভীতির ছিঁটেফোঁটা ছাড়াই উড়োজাহাজ থামলো টার্মিনালের সামনে। দরোজা দিয়ে বেরোতেই এক অপূর্ব দিন ধরা দিলো। তখন কক্সবাজারের আকাশে মন ভালো করে দেওয়া ঝলমলে রোদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
ইইউডি/এইচএ/
** আকাশপথে আস্থার নাম ইউএস-বাংলা