এ তথ্য জানিয়েছেন ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। শনিবার (১০ মার্চ) কক্সবাজারের একটি হোটেলে আয়োজিত এয়ারলাইন্সটির দ্বিতীয় কাস্টমার সাকসেস সামিটে কথা বলছিলেন তিনি।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত তিন বছরে দেশের অন্যতম এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে ইউএস-বাংলা। এ সময়ে আমরা ৩৫ হাজারের বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। যা দেশের ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে মাত্র দু’টি এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করে এখন দেশের বাইরেও ফ্লাইট পরিচালনা করছি।
২০০৯ সালে ইউএস বাংলা গ্রুপের যাত্রার কথা স্মরণ করে এমডি বলেন, আমরা পাঁচটি মৌলিক চাহিদার কথা ভেবে কাজ শুরু করি। এরইমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, আবাসন প্রকল্প করেছি। প্রাইভেটভাবে হাইটেক পার্ক করছি। সেখানে শিগগির টিভি, ফ্রিজসহ হোম অ্যাপলায়েন্স তৈরি করা। এছাড়া লাইট ও হেভি গাড়িও তৈরি করবো।
তিনি সম্মেলনের বিষয়ে বলেন, এ ধরনের সম্মেলন করার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যারা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে এক সুতোয় গাঁথা, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসাকে উৎসাহিত করা, আর দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করা। যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকে আমরা ফ্লাইট শিডিউল ও যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। আমরা ব্যবসায়িক সম্পর্কের মাধ্যমে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে করতে পেরেছি আপনাদের এয়ারলাইন্স।
সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল। অন্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনিয়ট প্রিফনটেইন, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব, দি বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।
সামিটে উল্লেখযোগ্য আয়োজনের মধ্যে ছিল বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড, ট্রাভেল ও কর্পোরেট পার্টনারদের সঙ্গে ইউএস-বাংলার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ফানুস ফেস্টিভালসহ অনেক ইভেন্ট।
বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার সাতটি দেশ ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত ও নেপালের ট্রাভেল পার্টনারদের মধ্যে ২০১৭ সালের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ‘বেস্ট অব দ্য বেস্ট সেলার অব দ্য ইয়ার’ নির্র্বাচিত চট্টগ্রামের ‘বি ফ্রেশ ট্রাভেলস্’কে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া ইউএস-বাংলার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রাভেল এজেন্টদের মধ্যে যারা বেস্ট সেলার নির্বাচিত হয়, তাদের মধ্যেও সম্মাননা স্মারক ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয় সামিটে।
‘ফ্লাই ফাস্ট-ফ্লাই সেফ’ শীর্ষক স্লোগানে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ৭৬ আসনবিশিষ্ট দু’টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-যশোর ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ইউএস-বাংলা। এখন অভ্যন্তরীণ সব রুট ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, দোহা, মাস্কাট, কাঠমুন্ডু ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সটি। বর্তমানে ইউএস-বাংলার প্লেনবহরে চারটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ ও চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে আরও তিনটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০, তিনটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং দু’টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এয়ারক্রাফট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রা শুরুর পর থেকে ইউএস-বাংলার ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ অন-টাইম ফ্লাইট পরিচালনা ও আন্তর্জাতিক মানের ইন-ফ্লাইট সার্ভিস যাত্রীসাধারণের কাছে এটিকে নির্ভরযোগ্য এয়ারলাইন্সের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এরইমধ্যে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) ও ট্রাভেল বিষয়ক অন্যতম পত্রিকা দি বাংলাদেশ মনিটর কর্তৃক সেরা এয়ারলাইন্সের স্বীকৃতি পেয়েছে এটি।
দেশীয় বিমান পরিবহনখাতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই একমাত্র কোম্পানি যা আইএসও ৯০০১:২০০৮ সার্টিফাইড এয়ারলাইন্স এবং নিউইয়র্ক সিটির ডিভিশন অব কর্পোরেশনের একমাত্র তালিকাভূক্ত বাংলাদেশি এয়ারলাইন কোম্পানি। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লাইয়ার প্রোগ্রাম ‘স্কাই স্টার’সহ অনেক সেবাধর্মী ও সময়োপযোগী সার্ভিস উল্লেখযোগ্য। স্কাই স্টার কার্ড ব্যবহারকারীরা নির্ধারিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এছাড়াও যাত্রীদেরকে বেশ কয়েকটি সার্ভিস দিয়ে এভিয়েশন শিল্পে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইউএস-বাংলা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আন্তর্জাতিক রুটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের পিক-ড্রপ সার্ভিস, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণের পর ১০ মিনিটে ল্যাগেজ ডেলিভারি, ওয়েজ আর্নার্সদের জন্য বিমানবন্দরে প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ২০ শতাংশ মূল্যছাড়, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ও গলফারদের ১০ শতাংশ মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ইএমআই ও নানাবিধ যাত্রীসুবিধা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৮/আপডেট ১৯৪১ ঘণ্টা
ইইউডি/এইচএ/
** কক্সবাজারের আকাশে ঝলমলে রোদ
** আকাশপথে আস্থার নাম ইউএস-বাংলা