অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকারকে কাজ করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে তা করাও হচ্ছে।
তাদের পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে ন্যূনতম নিয়ম-নীতির আওতায় তা হতে হবে। বড় ঋণখেলাপিদের সবার সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশই এখন আর খেলাপি নন।
তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
কিভাবে তাঁদের বাঁচিয়ে রাখা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। মেরে ফেললে টাকা ফেরত আসার কোনো সুযোগ থাকবে না। প্রতিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজমেন্টের এই কাজটা করা উচিত।
ব্যাংকে আগের চিত্র ছিল লুটতরাজের। এখন সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই সচেতনতার সঙ্গে প্রতিদিন এসব বিষয় তদারকি করছে। এটা খুবই ইতিবাচক। আগে ছিল তার উল্টো।
একজন রাজনৈতিক নেতার কথায়ই ঋণ দেওয়া হতো। এখন এসব সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত বা অর্থনীতি খুবই ভঙ্গুর অবস্থানে পৌঁছেছিল। চুরি হয়েছে, ডাকাতি হয়েছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে দেশের টাকা বাইরে পাচার হওয়ায়। টাকা পাচার হওয়ার কারণে আমাদের দেশে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। অর্থনৈতিক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও সাধিত হয়নি। জিডিপি গ্রোথ হয়নি। টাকা পাচার না হলে আমাদের এত কষ্ট হতো না। পাচার কমবেশি সব দেশেই হয়। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে যে মাত্রায় পাচার হয়েছে তা অনেক বেশি।
অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণত এক বছর থাকে। ২০২৪ সালের আগস্টে এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেবে। তার পরও যাঁরা সরকারে আছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো আরো ভালো বলতে পারবে। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ, শিক্ষা, পরিকল্পনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য যে দিকনির্দেশনা রেখে যাচ্ছে, সেগুলো যদি নীতি হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকে, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। আমাদের দেশে ধারাবাহিকতারও অভাব থাকে। ধারাবাহিকতা যাতে থাকে, সেটা চিন্তা করতে হবে।
অনেক বড় ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করতে পারছেন না। সর্বনিম্ন একটা ডিপোজিট নিয়ে তাঁদের হিসাব সচল করে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক সমালোচনা হলেও তা সবার জন্যই ভালো। ব্যাংকের টাকা আমানতকারীর। সেই টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সততা, স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহির সঙ্গে। এই টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাজ হচ্ছে। তাঁদের আস্থাহীনতার কোনো প্রশ্ন নেই। তাঁদের একটা সর্বনিম্ন ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তাঁদের ঋণ রিশিডিউল, রিস্ট্রাকচার করে নিতে হবে। দেশে বিনিয়োগ আসবে। অনেকেই বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনতে চান, কিন্তু সরকার ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে। দ্রুত হাঁটতে গিয়ে যাতে পা পিছলে পড়ে না যাই। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে এটা সহজ। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কঠিন।
লেখক: সিনিয়র ব্যাংকার ও চেয়ারম্যান, অগ্রণী ব্যাংক
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৫