বগুড়া: চলতি মৌসুমে বগুড়ায় মোট ৫৫ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই তুলনায় প্রায় ৮৩ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন বীজের প্রয়োজন।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান।
বগুড়া সবজিখ্যাত হিসেবে পরিচিত। এ জেলায় ফসলি মাঠ ফেলে রাখেন না চাষিরা। আর তাই তারা মৌসুমি বিভিন্ন সবজি আবাদের পর এবার নেমে পড়েছেন আলু চাষে। কেননা আলুতে অতিরিক্ত মুনাফা চাষিদের আকৃষ্ট করে থাকে। বগুড়ার শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম, শেরপুর সদরসহ প্রায় ১২টি উপজেলায় মাঠের রোপা-আমন ধান কাটা মাড়াই শেষের পথে। এ জেলার চাষিরা এখন একযোগে তাদের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে বিভিন্ন জাতের আলু চাষে ব্যস্ত রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠে মাঠে চাষিরা একদিকে তাদের জমিগুলো প্রস্তুত করতে হাল দিচ্ছেন, আলগা মাটি সমান করতে জমিতে মই দিচ্ছেন, অন্যদিকে আলু বীজ বপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কেউ কেউ। জেলার সর্বত্রই পুরোদমে চলছে আলুর জমি প্রস্তুতের কাজ।
অনেক এলাকায় জমি তৈরির কাজ শেষ করেছেন চাষিরা। অনেকেই জমিতে আলু লাগানোর কাজও শেষ করেছেন। কিছু মুনাফালোভী ডিলারের যোগসাজশে গেল কয়েক বছর আগে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছিল। সেসময় নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে বীজ কিনতে হয় বলে মন্তব্য করেন অনেক চাষি। কিন্তু এবার চাষিদের বীজ পেতে কোনো সমস্যা না হওয়ায় স্বস্তিতে তারা।
সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়নের মানিকচক এলাকার আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলায় সিংহভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। যেসব জমির ধান কাটা হয়ে গেছে বা যেগুলোতে মৌসুমি বিভিন্ন সবজি লাগালো হয় এমন জমিগুলোতে আলুচাষে ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের।
এ মৌসুমে আলুতে ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
এ জেলার অনেক চাষি অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ার আশায় আগাম আলুচাষ করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আলু বীজের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম এলাকার চাষি জিহাদুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ জেলার চাষিরা সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে একযোগে আলু চাষে জন্য জমি প্রস্তুত করার কাজ সম্পন্ন করেন। এখন মাঠের সিংহভাগ জমিতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগে বীজ ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। কিন্তু গত বছর ও চলতি বছরে এমন হয়রানিতে পড়তে হয়নি তাদের।
তারা বলেন, এখন বাজার থেকে তারা লাল পাকরি আলুর বীজ কিনছেন প্রতিকেজি ৪০-৫০ টাকা দরে এবং কার্ডিনাল প্রতিকেজি ৩০-৩৫ টাকা দরে। তবুও সবমিলিয়ে আলুতে লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। কঠোর পরিশ্রম আর অর্থ ব্যয় শেষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোই স্বপ্ন তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ায় চলতি মৌসুমে উপশী ও স্থানীয় মিলে ৫৫ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপশী ৪৫ হাজার ৪শ ও স্থানীয় ১০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হবে। যার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে (উপশী-১০ লাখ ৭০ হাজার ৮৩০ মে. টন ও স্থানীয়-১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫০ মে. টন) ১২ লাখ ২৫ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, হেক্টর প্রতি জমিতে দেড় (১৫শ কেজি) মেট্রিক টন বীজের প্রয়োজন। এ হিসাবে জেলায় প্রায় ৮৩ হাজার ৫শ ৩৫ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৩ হাজার ৮শ ৭০ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বিএডিসির অধীনে বগুড়া অঞ্চলে ২৯১ জন ও জয়পুরহাট অঞ্চলে ১৩০ জন ডিলার রয়েছেন। বগুড়া ও জয়পুরহাটের জন্য সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন আলুর বীজের মার্কেটিং চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। যা দেশের মোট ২৯টি হিমাগারের মধ্যে কয়েকটি থেকে বীজের এ চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় আলু বীজের কোনো সংকট নেই। চাষিদের অনেকেই নিজেরাই তাদের চাহিদা মতো বীজ বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখে।
তিনি জানান, বিএডিসির ডায়মন্ড, গ্রানুলা, কারেজ, কার্ডিনাল, লেডিরোসেটা, ভুলুমিয়া ও রোজাগোল্ড জাতের এ ও বি গ্রেডের এবং এস্টারিক জাতের এ ও বি গ্রেডের প্রতিকেজি বীজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত এ দামের চেয়ে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি মূল্যে ডিলাররা চাষিদের কাছে এ বীজ বিক্রি করে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
কেইউএ/এএটি